সাভারসহ দেশের ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন
এইচ এম সাগর, সাভার প্রতিনিধি: সাভার মডেল মসজিদসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। এসব মডেল মসজিদ এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ৫০টি মডেল মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রাজালাখ ফার্ম এলাকায় এই মডেল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মডেল মসজিদটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজ প্রায় ২২ মাসের মধ্যেই শেষ করা হয়েছে।
আরব বিশ্বের মসজিদ কাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। মসজিদটিতে একসাথে ১ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের স্থান এবং প্রতিবন্দ্বীদের জন্যও রয়েছে এবাদত খানা। এই মসজিদে নামাজের পাশাপাশি রয়েছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ইসলামিক পাঠাগার। দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। মসজিদের ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধন ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মৃত ব্যক্তির গোসল ও জানাযার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পুরো মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নির্বিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য সার্বক্ষনিক জেনারেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে আগুনি নির্বাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে পুরো ভবনে।
আরো যা রয়েছে: মসজিদটির ভিতরে শোভার্বধনের জন্য লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি ও দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের দরজা জানালাও দামি কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে। মসজিদের ভিতরে বসানো হয়েছে নানান আসবাবপত্র।
মসজিদের দেয়াল রাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রঙ ও গ্লাস দিয়ে। মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের বিদেশি মারবেল টাইলস। আযানের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য বসানো হয়েছে উঁচু মিনারের উপর মাইক। এছাড়া মসজিদের উপরে বসানো হয়েছে বড় একটি গম্বুজ ও ছোট ছোট চারটি গম্বুজ। দৃষ্টিনন্দন এই মডেল মসজিদটি দূর থেকে যে কোন মানুষের মন কাড়বে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে মসজিদটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন সেখানে ভীড় করছেন অসংখ্য দর্শনাথী।
যেসব স্থানের মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে: বৃহস্পতিবার (১০ জুন) যে ৫০টি উপজেলায় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে সেগুলো হলো: ঢাকার সাভার, ফরিদপুরে মধুখালী ও সালথায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, রাজবাড়ী সদর, শরীয়তপুর সদর ও গোসাইরহাট, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু, নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা, সিরাজগঞ্জ জেলা সদর ও উপজেলা সদর, পাবনার চাটমোহর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পবা, দিনাজপুরের খানসামা ও বিরল, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও উপজেলা সদর, রংপুর জেলা সদর, মিঠাপুকুর, উপজেলা সদর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, নোয়াখালীর সুবর্ণচর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও তারাকান্দা, চট্টগ্রাম জেলা সদর, লোহাগড়া, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ, জামালপুরের ইসলামপুর ও উপজেলা সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বিজয়নগরে, ভোলা সদর, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, কুমিল্লার দাউদকান্দি, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, কুষ্টিয়া সদর, খুলনার জেলা সদর, চাঁদপুরের কচুয়া, ঝালকাঠির রাজাপুর এবং চুয়াডাঙ্গা সদর।
৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি বছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা এবং ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন সুবিধাও রাখা হচ্ছে এসব মসজিদে। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন প্রতিটি মসজিদে একসাথে ১২০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন।
এছাড়া উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। এটাই হচ্ছে বিশ্বে প্রথম কোনো সরকারের একই সময়ে এত বিপুলসংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা।