প্রধান মেনু

ভূমি জালিয়াতি ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে পাহাড়সম অর্থ-সম্পদের মালিক

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ ২৭ মে ২০১৯ঃ শৈলকুপার বেষ্টপুর গ্রামের ছেলে যশোর ডি.আর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহীম আজাদ বাবুল ও সাবেক যশোর দু’দক উপ-সহকারি পরিচালক ও বর্তমান ঢাকা হেড অফিসে কর্মরত দু’দক সহকারি-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ ঘুষ-দুর্নীতি ও ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে রাতারাতি পাহাড়সম অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গিয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে দুর্নীতিবাজরা নিজেদের নামে-বেনামে, এমনকি পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজনদের নামেও কোটি কোটি টাকা ও পাহাড়সম সম্পদের মালিক বনে গেছেন। কীর্তিমান এই ভূমি জালিয়াত কারির নাম ইব্রাহীম আজাদ বাবুল আর একজন দুর্নীতিবাজ দু’দক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ। দুর্নীতির দুই বরপুত্র এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে,তারা কর্মক্ষেত্রে এখনো বহালতবিয়তে রয়েছেন।

যশোর দু’দক উপ-সহকারি পরিচালক থাকাকালিন দু’দক উপ পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শৈলকুপা থানার মামলা নং ০৬/২৬০ তারিখ ১০/১১/২০১৪ থেকে প্রকৃত অপরাধিদের বাদ দিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। শৈলকুপা উপজেলার বাসিন্দা ও যশোর ডি.আর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা(অ.ড়) ইব্রাহীম আজাদ বাবুল ভূমির সকল পর্যায়ের জালিয়াতি কাজ দলিল জাল,ষ্ট্যাম জাল,স্বাক্ষর জাল,সীল জাল,পাকিস্থান আমলের স্ট্যামসহ যে কোন বছরের স্ট্যাম দিয়ে জাল দলিল তৈরি সহ ভূমি জালিয়াতির সকল অপকর্মের হোতা ইব্রাহীম আজাদ বাবুল।বাবুল সকল প্রকার জালিয়াতির কাজসহ ভূয়া দলিল রেজিষ্ট্রি জালিয়াতি, ভূয়াপর্চা তৈরি,নামপত্তনের খারিজ খতিয়ান জালিয়াতি, রেকর্ড রুমের কাগজ নষ্ট,রেজিষ্ট্রি দলিলের ভোলিয়াম বই ছেড়া সহ সকল অপকর্ম করা তার কাছে নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার।যশোর ডি.আর অফিসের বড় বাবুর সহযোগিতায় কতিপয় দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি ভূমি জালিয়াতির সকল কাজ করে থাকেন ।

শৈলকুপা উপজেলার ১২নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আদিবাসি চল্লিশ বছর আগে যিনি ভারত চলে যান, হাটফাজিলপুরের হাজরা বালা সরদারের ভাই নির্মল কুমার সরদারের ১৬৯নং হাটফাজিলপুর মৌজার ১১ শতক জমি জালিয়াতি করে রেজিষ্ট্রি করায় যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা করেন। টাকার বিনিময়ে দলিল লেখক,ভুয়া দাতা,ব-কলমে স্বনাক্তকারিসহ মূল অপরাধিদের বাদ দিয়ে যার জমি জাল করে রেজিষ্ট্রি করল সেই প্রকৃত জমির মালিকসহ তৎকালিন কর্মরত শৈলকুপার সাব রেজিষ্টারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বিগত কয়েক বছর আগের জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং ভুমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ঢাকা , ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত দরখাস্তের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্মল কুমার সরদার হাটফাজিলপুর গ্রামে সরদার পাড়ায় এস ,এ দাগ ৩০৭৭ দাগে ১১ শতক জমি ০৪/১২/১৯৭২ তারিখে ৬৫২০ নং কবলা দলিল মুলে খরিদ করে তার আপন বোন হাজরা বালা সরদারকে ভোগ দখল দিয়ে ভারতে চলে যান। হাজরা বালা হাল রেকর্ডের সময় ৫ শতক জমি তার নিজের নামে ও ৫ শতক জমি তার নিজের ভাই নির্মল কুমারের নামে হালরেকর্ড করতে সক্ষম হয় ।

নকল নির্মল সাজিয়ে, ব-কলমে সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষর করে ,স্বাক্ষি সাজিয়ে,ভূয়া নাম খারিজ তৈরী করে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকার জমি হাতিয়ে নেয় নকল দাতা ও দলিলে ব-কলমে সনাক্তকারি এবং দলিল লেখক মৌরি। তৎকালিন সময় বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত জালিয়াতির খবর যশোর দু’দকে ২০১০ সালে একটি আবেদন পড়লে দু’দক চার বছর তদন্ত পূর্বক, যশোর দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।যাহার মামলা নং ০৬/২৬০ তারিখ ১০/১১/২০১৪ দুনীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা মতে।

মামলার জালিয়াতী দলিল নং ৫৬৮৬/০৯, তারিখ ২১/ ১২/০৯, ৫৬৮৫/০৯, তারিখ- ২১/১২/০৯ জালিয়াতী নাম পত্তন নং- ৫৮৯/১-১/০৯-১০ তারিখঃ ২৮/০৭/০৯ ইং।শৈলকুপা থানা সূত্রে জানা যায় , দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর এর ই/আর নং ২০/২০১০ অনুসন্ধান কালে প্রাপ্ত রেকর্ড পত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করেন এবং প্রধান কার্যালয় ,ঢাকার স্মারক নং দুদক / একা / অনঃ ও তদান্ত -১/৪৪-২০১০/ঝিনাইদহ/৩০০৩১,তারিখে ১৫/১০/২০১৪ মূল আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমতি প্রদান করা হয় । সমন্বিত জেলা কার্যালয় , যশোর এর উপ- পরিচালক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ তদন্ত পূর্বক শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন । তিনি ১৯৫৭ সনে এস,এ রেকডীয় মলিক অনন্ত কুমার সরদারের ০৪/১২/১৯৭২ সালের ৬৫২০ নং কবলা দলিল, হাটফাজিলপুর ১৬৯ নং মৌজার ৩৪৮৫ নং খতিয়ান ভূক্ত ১৫১৪১ নং দাগে দন্ডবিধির ৪২০,৪৬৭,৪৬৮,৪৭১/১০৯ পেনাল কোড এবং তমধ্যে ১৯৪৭ সনের দুর্নিতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা মতে স্মারক ঃ ৩৪৮২(৩) ১,তারিখ ১০/১১/২০১৪ শৈলকুপা থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা মতে আসামীগন ১৩৫২ নং খতিয়ানের খরিজের উদ্ধৃতি দিয়ে ১৩৫২/১ নম্বর খতিয়ানের ভূয়া পর্চা তৈরী করে ৫৬৮৫/০৯,এবং ৫৬৮৬/০৯ দলিল রেজিঃ সম্পন্ন করে প্রতারনা ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহন করায় শান্তি যোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে রেকর্ড পত্র দৃষ্টে প্রাথমিক ভাবে প্রতিয়মান হওয়ায় ,আসামী নির্মল কুমার সরদার ,পিতা মৃত কালীপদ সরদার এবং অপর আসামী তৎকালীন শৈলকুপায় কর্মরত সাব রেজিষ্টার মোঃ মমিন উদ্দিন মন্ডল , বর্তমানে সাব রেজিষ্টার গোমস্তপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, চাপাই নবাবগঞ্জ , পিতা নিজাম উদ্দীন মন্ডল ,থানা ভুরুঙ্গামারি ,জেলা কুড়িগ্রাম কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।বিচার বিহিন মামলাটি আজও অবদি শৈলকুপা থানায় থেকে যায়।

০৯ আগষ্ট ২০১৭ সালে ঝিনাইদহে ডাঃ কে আহম্মেদ কমিউনিটি সেন্টারে দু’দকের গণশুনানীতে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালিন কমিশনার এ.এফ.এম.আমিনুল ইসলাম এর নিকট যশোর দু’দকের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের ঘুষ-দুনীর্তির প্রমানসহ একটি আবেদনের ফাইল জমা দেওয়া হয়েছিল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এ.এফ.এম.আমিনুল ইসলাম গণশুনানীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের সামনে কথা দিয়েছিলেন তদন্ত পূবর্ক দু’দক কর্মকর্তার বিচারের আওতায় আনবেন। কিন্ত আজও অবদি সঠিক তদন্তের অভাবে সেই দু’দক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।

শৈলকুপা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের আরো জালিয়াতী দলিল নং- ৬৩০৫/১১, রেজিঃ তাং- ২৬/১২/১১ ইং জালিয়াতী নাম পত্তন নং-৪০/১ -১১/৮৯-৯০ ,জালিয়াতী হাল খতিয়ান বুজরাত নং১০৬০, ডিপি খতিয়ান নং ২৭।দলিল নং- ২০৭১/১৪,রেজিষ্ট্রি তারিখ ২৮/০৪/২০১৪,দলিল নং ১৭৫০/১০ (দু’দক তদন্ত করে) রেজিষ্ট্রি তারিখ ২৩/০৩/২০১০,জালিয়াতি দলিল নং-৬৮৪০/৬৮ তাং- ২৬/১২/১৯৬৮ ইং ।

দুনীতি দমন কমিশন,প্রধান কার্যালয় ঢাকার স্বারক সংখ্যা ৪৪-২০১২ ঝিনাইদহ ২৪৪৭৮নং তারিখে ১৭/০৯/২০১২ খ্রিঃ।দলিল জালিয়াতি সিন্ডিকেট যশোর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে গ্রহিতা রেজাউল ইসলাম ও দাতাঃ ফরিদুল ইসলাম, দলিল নং ১১৩৯/৮১ , রেজিষ্ট্রি তারিখঃ ২০/০১/১৯৮১ সালের দলিলটি যশোর সাব-রেজিষ্ট্রি (ডি.আর)অফিসের (অ.ড়)বড় বাবু ,শৈলকুপার ১৩নং উমেদপুর ইউনিয়নের বেষ্টপুর গ্রামের ইব্রাহীম আজাদ বাবুলের সহযোগিতায় যশোর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের নকলখানা থেকে ভোলিয়াম বই এর ১১৩৯/৮১ নং দলিলের সব পাতা ব্যাপক টাকার বিনিময়ে ছিড়ে ফেলতে সক্ষম হন ।

যশোর ডি.আর অফিসের(অ.ড়) ইব্রাহীম আজাদ বাবুল জাল দলিলসহ বহুবিধ জালিয়াতির কাজ টাকার বিনিময়ে করে থাকেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে বাবুল গাড়ি-বাড়ি,ঢাকায় ফ্লাট সহ অঢেল সম্পদেরন মালিক বনে গিয়েছেন। দু’দক তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

ভুক্তভুগী সচেতন মহল প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও এখন পযর্ন্ত কোন প্রতিকার পায়নি।অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা আরো বে-পরোয়া।তাই দ্রুত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও ভূমি জালিয়াতী চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ দু’দক চেয়ারম্যান মহোদ্বয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এবং ভূক্তভুগিগন প্রকৃত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এবং ভূমি জালিয়াতকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান।