প্রধান মেনু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বাণী

ঢাকা, ১২ আশ্বিন (২৭ সেপ্টেম্বর) : রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “শুভ জন্মদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর জ্যেষ্ঠ কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁকে জানাই আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।

ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরপরই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে শেখ হাসিনার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন তাঁর পিতা বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, সংগ্রামী জীবন এবং দেশ ও গণমানুষের রাজনীতি।যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালির অধিকার আদায়ের সকল লড়াই-সংগ্রামে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রামী, সাহসী।

জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। শহীদ হন তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ অনেক আপনজন। এ সময় তিনি ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। মা, বাবা, ভাইসহ আপনজনদের হারানো বেদনাকে বুকে ধারণ করে পরবর্তীতে ছয় বছর তাঁকে লন্ডন ও দিল্লীতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলাসহ বহুবার শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতই তাঁকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এটি ছিল এক অনন্য মাইলফলক।

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বজন হারানো বেদনা বুকে নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়, বিজয় হয় গণতন্ত্রের। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।

এ সময় তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সাথে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় আসে।

তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এসময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়ন, সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত স্থল সীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি জাতিকে অনেক দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন।

চলমান পাতা -২- জাতির পিতার মতো শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী এবং নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর।

তাইতো ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। দুবাই ভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা Khaleej Times তাঁকে ‘New star of the East’ উপাধিতে ভূষিত করে তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্যমোচনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশি বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান। দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীব মহাপরিকল্পনা’ (ডেল্টা প্লান ২১০০) গ্রহণ করেছেন। দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ অকালে ঝরে গেছে।

বাংলাদেশেও অনেক রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিল্পী সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, চিকিৎসক, নার্সসহ নানা পেশার ও বয়সের মানুষ ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। পাশাপাশি অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, বহির্গমন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রা থমকে দাঁড়িয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে উন্নত বিশ্ব যেখানে হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, সঠিক সিদ্ধান্ত ও অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে যাচ্ছে।

এ জন্য আমি তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। এ উদযাপন জাতির ইতিহাসে যুক্ত করবে নতুন মাইলফলক। জাতির পিতার মতোই শেখ হাসিনা গণমানুষের নেতা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে তিনি শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পেয়েছে স্বাধীনতা আর তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে।আমি শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও অব্যাহত কল্যাণ কামনা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ চলার পথ সফল হোক, সার্থক হোক।

জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”



« (পূর্বের খবর)