প্রধান মেনু

পঞ্চগড়ের বোদায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া পরিবারকে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা মানবিক সহায়তা প্রদান 

এন এ রবিউল হাসান লিটন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৬৯ জনের পরিবারকে ৫৫ হাজার টাকা মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মৃতদের পরিবারের হাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা ও দুই বস্তা শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হয়। এর আগে সৎকারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানবিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী এড. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৬৯ জনের পরিবারের হাতে টাকা ও শুকনো খাবারের বস্তা তুলে দেন।
এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল আলীম মাহমুদ, পুলিশ সুপার এস, এম, সিরাজুল হুদা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফারুক আলম টবি, বোদা পৌর মেয়র এড ওয়াহিদুজ্জামান সুজা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান জিল্লু, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, নৌকাডুবিতে মারা পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘নৌকাডুবিতে একসঙ্গে এত মানুষ দেশের আর কোথাও মারা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি আন্তরিক ও মানবিক, তার পক্ষে সমবেদনা জানিয়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে এসেছি। সরকারসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আপনাদেরকে সান্ত্বনা ও শক্তি জোগাতে পাশে রয়েছে।’
এসময় রেলপথ মন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চগড় ও দেশের ইতিহাসে নৌকাডুবিতে এত মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা এটিওই প্রথম। এ শোক কখনো সহ্য করার মতো না। তারপরও আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ঘটনার দিন আমরা ২০ হাজার টাকা ও পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে ৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হল। সেই সঙ্গে দুর্যোগের সময় আমরা যে খাবারটা দেই সেটা দুই বস্তা করে দেওয়া হলো। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। আর খুব শিগগিরই আউলিয়া ঘাট থেকে বদেশ্বরী ঘাটে যাওয়ার জন্য সেতু একনেকে এটি পাশ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে সেতু নির্মাণে কাজ শুরু হবে।’
এদিকে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চম দিনের মত উদ্ধার কাজ চলছে। নিখোঁজ ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯ জনে। এসব মরদেহ পঞ্চগড়ের ও দিনাজপুর বিভিন্ন নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য মতে, ৬৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, এখন পযর্ন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজ ৩ জনের উদ্ধারে কাজ চলছে।
এর আগে গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আড়াইটার ঘাটে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ধারন ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ওঠায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে এলাকাবাসী জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রায় শতাধিক মানুষ।
মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৬ জন, দেবীগঞ্জের ১৭ জন, আটোয়ারীর ৩ জন ও ঠাকুরগাঁওয়ের ২ জন পঞ্চগড় সদর ১ জন রয়েছেন। ৬৭ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। বাকি ২১টি শিশু রয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ দিনের শোক দিবস পালন করা হয়েছে।
এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্তে কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সৎকারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা ও কাপড় এবং জামাতে ইসলামের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ৬৯ জনের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির সময় শেষ হবে। আশাকরি সঠিক সময়ে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারব।