প্রধান মেনু

নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে অগ্রগতি হতো আরো বেশি — তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরকে ধারাবাহিক সাফল্যের আরো এক বছর বলে অভিহিত করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ। সেইসাথে তিনি বলেন, নেতিবাচক রাজনীতি না থাকলে অগ্রগতি আরো বেশি হতো। আজ দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতিবাচক রাজনীতি (Politics of Denial) ও সংঘর্ষের রাজনীতি (Politics of Confrontation) পরিহারের পক্ষে। কিন্তু একপক্ষ হাত প্রসারিত করলে তা সম্ভব নয়, বিরোধী পক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। দিনটি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘গতবছরের ৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এদিন টানা তৃতীয়বার এবং দেশে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। একইসাথে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ শপথ গ্রহণ করেছিলেন। সেই হিসেবে সরকারের আজকে একবছর পূর্তি।’ দশ বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গতবছরও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্যের বছর ছিল, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৯ সালের দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে, ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই অভিযাত্রায় বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত নয়, ইতিমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্যঘাটতির দেশ নয়, খাদ্যে
উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।

ড. হাছান বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একইসাথে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশের নিচে এবং গত ১১ বছরে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রসমূহের যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগফল নেয়া হয় তাহলে, বাংলাদেশে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অর্জন জাতিকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে, স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার স্বাক্ষর।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেটি ২০০৮ সালে ছিল ৬০০ ডলার, সেটি গতবছর ২০০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারে যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার। আজকে বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য সেখানেই, পাকিস্তানে টেলিভিশনে আলোচনা হয় পাকিস্তানকে যেন পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তিনিও অকপটে স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশ আজকে সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। ৯৫ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মুজিববর্ষে আমরা আশা করছি দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। সরকার পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পদ্মাসেতুর ৮৪ দশমিক ৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উপমহাদেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে মোটর টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে, যার ৪০ শতাংশের বেশি কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকায় চলাচলের সুবিধার্থে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে, যা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বলেও জানান তিনি।

খাদ্য উৎপাদন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন আমরা বিশ্বের সবচেয়ে কম আয়তনের জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্তের দেশ, যা শুধু অন্য দেশগুলোর কাছে নয়, বিশ্ব খাদ্যসংস্থা কাছেও বিস্ময়। বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি ৪৪ লাখ মেট্রিক টন যা ২০০৬ সালের তুলনায় ৬১ ভাগ বেশি। নিজ মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানো প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কয়েক যুগ আগে থেকে। কিন্তু সেটি সম্ভবপর হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দূরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র
ভারতে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে। এ মাসেই বাংলাদেশ বেতারও সমগ্র ভারতে সম্প্রচারিত হবে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রম নির্ধারণের জন্য বারংবার তাগাদা দেয়া হয়েছিল, যা গত বছর আমরা ঠিক করতে পেরেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে যার কাজ
অনেক দূর এগিয়ে গেছে, জানান মন্ত্রী।

ড. হাছান বলেন, বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছি। অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা একটি নিয়মনীতির মধ্যে এনেছি। অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল কোর্ট চলছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।