প্রধান মেনু

গরুর খামারী ও ব্যাপারীদের কপালে চিন্তার ভাজ

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ কালামিয়া আর ধলামিয়াকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কুঞ্জনগরের ইব্রাহিম। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দুটি বাছুর কিনেছিলেন তিনি। এখন গরু দুটির দাম তিন লাখ টাকা। গেল কোরবানীর ঈদে ব্যাপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দাম করে বায়না করতেন। এবার কোন ব্যাপারি আসেনি। করোনার কারণে ঢাকায় কোরবানীর হাট বসবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে ব্যাপারিরা গরু কিনতে আসছে না। ন্যায্য মুল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে তাকে। শুধু ইব্রাহিম নয়, তার মতো কয়েকশত খামারীর কপালে চিন্তার ভাজ।

গাংনী উপজেলা পশু সম্পদ বিভাগের হিসেব মতে, এ উপজেলার ৮৯০ টি খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা ৪০ হাজার ৩৫০ টি গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নেপালী, হরিয়ান ছাড়াও দেশি জাতের গরু প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালন করছেন খামারীরা। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনে বেশ খরচ হচ্ছে খামারীদের। তাদের স্বপ্ন, কোরবানীর ঈদে গরু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে আবার বাছুর কিনে পালবে। এভাবে অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবক চাকরীর প্রত্যাশা না করে পশু পালন করছেন। তবেকাঙ্খিত মুল্য না পেলে খামারীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দুয়েকটি গরু পালন করছেন তারাও পুঁজি হারাতে পারে।

হেমায়েতপুর গ্রামের খামারী আনারুল জানান, তার খামারে নেপালী ও দেশী জাতের ৩৫ টি গরু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। গরু গুলি বিক্রি হলে তিন লাখ টাকা লাভ হতো। এবার পাশর্^বর্তী চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া লকডাউন হওয়ায় পশুহাট বন্ধ হয়ে গেছে তাই গরু বিক্রি করতে পারেন নি। আবার ঢাকাতে পশু হাট বসা নিয়েও বেশ শঙ্কায় রয়েছেন। চড়ামুল্যে গরুর খাবার কিনতে হচ্ছে। এ গরু ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শুধু খামারী নয়, ব্যবসায়িদেরও চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

গাংনীর কামারখালী গ্রামের গরু ব্যবসায়ি লাল্টু জানান, গত তিন বছর ধরে কোরবানীর সময় ঢাকার পশু হাটে ২০/২৫ ট্রাক গরু নিয়ে বিক্রি করতেন। সব খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে দুলাখ টাকা লাভ হতো। কোরবানীর মাস দেড়েক আগেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে গেরস্তদের বাড়ি থেকে গরু বায়না করে আসতেন তিনি। এবার করোনার কারণে গরু বিক্রি হবে কি না তার নিশ্চয়তা না থাকায় গরু কেনেন নি। একই কথা জানালেন কুঞ্জনগরের টিক্কা খান ও সফিউদ্দীন।

গাবতলী পশুহাটের ব্যবসায়ি রশিদ মালিথা তিনি প্রতিবছর কোরবানীর ঈদে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া থেকে কয়েক হাজার গরু কেনেন। এবার বেচা কেনায় কোন ভরসা না থাকায় গরু কিনবেন না বলে স্থানীয় ব্যবসায়িদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন ছাতিয়ানের জাফর মীর। গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ মোস্তফা জামান জানান, এ উপজেলায় খামারী ও গেরস্তরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালন করছেন। গবাদি পশুর খাদ্যের দামও চড়া। সেহেতু উপযুক্ত দাম না পেলে খামারীরা পশুপালনে আগ্রহ হারাবে সেই সাথে পথে বসবে অনেকেই।