প্রধান মেনু

উদীচী’র সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব

গানের মাধ্যমে লড়াই অব্যাহত রাখা এবং সকলের ঐক্যতান গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে শুরু হরো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত “অষ্টম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৭”। গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লোক ও গণসঙ্গীত শিল্পী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। উদ্বোধনী পর্বে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পী-কর্মীরা পরিবেশন করেন বিশেষ আলেখ্য “আমার লড়াই সবার ঐক্যতান”। এটি গ্রন্থনা করেছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। এরপর শুরু হয় উদ্বোধনী আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত গণসঙ্গীত শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, যাঁরা গণসঙ্গীতের কিংবদন্তী শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস-এর সঙ্গীতের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণসঙ্গীত শিল্পী এবং গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর এবং বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী মুকুল দাস।www.nationaldetectivenews.com
উদ্বোধনী পর্বে প্রকাশ করা হয় উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন রচিত গণসঙ্গীতের অ্যালবাম। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলমের সঞ্চালনায় এ পর্বে অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন করেন সত্যেন সেন-এর ঘনিষ্ঠ সহচর ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী। সত্যেন সেন রচিত ১১টি গণসঙ্গীত স্থান পেয়েছে এ অ্যালবামে। এর মধ্যে দু’টি গান গেয়ে শোনান উদীচী’র শিল্পীরা। উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত চলছে। এ প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমনের জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান। এছাড়া, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তিনি। এবং পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যেসব লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যেসব প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে সেসব পরিবর্তনকে বাতিল করে নতুন করে বই প্রকাশের দাবিও জানান জামসেদ আনোয়ার তপন। উদীচী’র সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে দেশকে মুক্ত করতে গণঐক্য গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
এরপর সন্ধ্যায় ছিল দেশের খ্যাতনামা গণসঙ্গীত দল ও একক শিল্পীদের পরিবেশনা। এছাড়াও, উদীচীর জাতীয় গণসঙ্গীত পরিবেশনার বিভাগীয় পর্যায়ে যেসব দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছিল দেশবরেণ্য সঙ্গীত দল বহ্নিশিখা, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সিনেমা শহর, ধ্রুবতারা প্রভৃতি। এছাড়া, একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ছিলেন অংশুমান রায় অঞ্জন ও ফরহাদ। উৎসবের উদ্বোধনের আগে গত ২৮ মার্চ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার জাতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে দেশের নয়টি বিভাগীয় পর্যায়ের (ঢাকা পূর্ব ও পশ্চিমসহ) প্রতিযোগিতায় যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন তাঁরা অংশ নেন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। একক পর্যায়ে তিনটি এবং একটি দলীয়- মোট চারটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৯ মার্চ বিকেলে উৎসব মঞ্চে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হবে। থাকবে বিজয়ীদের পরিবেশনা। এছাড়াও, থাকবে দেশের খ্যাতনামা শিল্পী ও দলের গণসঙ্গীত পরিবেশনা। উৎসবের তৃতীয় ও শেষ দিন আগামী ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে অতিথি শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের গণসঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন থাকবে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গণসঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেয়া, গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসার এবং গণসঙ্গীতকে সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের জন্মদিবস উপলক্ষে প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এবার অষ্টমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এ উৎসব ও প্রতিযোগিতা। এবারের উৎসবের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “আমার লড়াই, আমার গান, উঠবে জেগে সর্বপ্রাণ”।

(দিদারুল করিম)