ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ২৪ অগ্রহায়ণ (৯ ডিসেম্বর) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ‘ভ্যাট দিবস’ ও ‘ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৩’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘ভ্যাট দিবস ২০২৩’ এবং ‘ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশের আপামর জনসাধারণ, ব্যবসায়ী এবং ভ্যাট আহরণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজস্বকর্মীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের নিরাপদ খাদ্যসহ ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভ্যাটের ভূমিকা অপরিহার্য। এবছর ভ্যাট দিবস এবং ভ্যাট সপ্তাহের প্রতিপাদ্য- ‘আমার ভ্যাট আমি দিব, কেনার সময় চালান নিব’ সঠিক ও সময়োপযোগী হয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য মুদ্রা, শূন্য বৈদেশিক মুদ্রা এবং শূন্য স্বর্ণ রিজার্ভ নিয়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন দেশের অর্থনীতি বিনির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা জাতীয়করণের মাধ্যমে সেখানে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ৭৬নং অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী তিনি কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশের লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে মাত্র তিন বছর সাত মাস তিন দিনেই বাংলাদেশ রেকর্ড ৯ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল এবং স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করেছিল।
ভ্যাট দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের অন্যতম প্রধান উৎস। রাজস্ব আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদানের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। এই অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি মজবুত ও টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার সময় ও অর্থসাশ্রয়ী আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর একটি মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ ও ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি এবং এগুলোর প্রয়োগিক জটিলতা অপসারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজিকরণ এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ফলে মূল্য সংযোজন কর আদায় কার্যক্রমে তদারকি নিশ্চিত হয়েছে এবং দিনদিন রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ঘরে বসেই অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। তাছাড়া, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং দেশীয় শিল্প বিকাশের চলমান ধারা বজায় রাখার জন্য বেশকিছু ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সুবিধা প্রদান ও বহাল রাখাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা বাংলাদেশ কাস্টমসকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ASYCUDA World-এর মানোন্নয়ন, স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণসহ বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের সরকারের গৃহীত এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সৃষ্টি হবে, রাজস্ব আহরণ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং সেইসাথে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি সমৃদ্ধ রাজস্বভান্ডার গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ সরকারের নিবিড় ও নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের বর্তমান লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন করা। আমরা উৎপাদন ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাচ্ছি। একইসাথে প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি- আমাদের সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার রূপকল্পকে সফল করতে সকলে নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাবে এবং একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবে।
আমি ‘ভ্যাট দিবস, ২০২৩’ এবং ‘ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২৩’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবীহোক।”