প্রধান মেনু

একাত্তরে ভারতের মানুষ নিজে কম খেয়ে এ দেশের শরণার্থীদের খাইয়েছে, বাংলাদেশ তা মনে রাখবে—-তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

ঢাকা, ২৬ পৌষ (১০ জানুয়ারি) : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে ভারত শুধু তাদের সীমান্ত খুলে দেয়নি, ঘরের দুয়ারই খুলে দেয়নি, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল। নিজে না খেয়ে বা কম খেয়ে এ দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থীদের তারা খাইয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সেটি আমাদের দেশের মানুষ মনে রাখবে।

আজ রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সফররত ৩৪ ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দুই দেশের মৈত্রী রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরা, এদেশের সমস্ত নাগরিক, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব তাদের ভূমিকার জন্য।’

কলকাতার ২৫ জন ও আসামের ৯ জন সাংবাদিকের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশের কিছু অংশ ঘুরে দেখেছেন এবং নিশ্চয়ই বাংলাদেশে যারা ১২-১৪ বছর আগে এসেছিলেন, তারা পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। এমনকি দু’বছর আগেও যিনি এসেছিলেন, দু’বছর পরেও অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান। আমাদের দেশের মানুষ এই পার্থক্যটা খুব একটা বুঝতে পারে না। কারণ সবাই উন্নয়নের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু যে ছেলে ১৪ বছর আগে বিদেশ গেছেন, সে এসে তার শহর চিনতে পারে না, তার গ্রামও চিনতে পারে না -এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।

বাংলাদেশকে সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বর্ণনা করে ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সামাজিক সম্প্রীতি, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি -এটি অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা সেটিই লালন করি, বুকে ধারণ করি। সে কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর উৎসবের মাত্রা বাড়ে। গত বছর দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে কয়েকশ’ বেশি ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রে সহায়তা করে নানাভাবে।’

পরিতাপের সুরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের দেশে আছে, অন্যান্য দেশেও আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে সেই অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। আপনারা দেখুন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যখন যেখানেই ছড়ানো হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিকে বিস্তৃত করেছে বিএনপি ঘরানার লোকজন, তাদের সমর্থক, তাদের নেতারা, তাদের কর্মীরা। সমস্ত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি জোটের সদস্য।

‘এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক কারণ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে বাঙালিদের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার জন্য  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না’ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন হাছান মাহ্‌মুদ ।

এসবয় কোনো গুজব যেন সাম্প্রদায়িক বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে সে জন্য সকল সাংবাদিকের সহযোগিতা কামনা করেন ড. হাছান মাহ্‌মুদ । তিনি বলেন, ‘দেখা গেল ভারতের কোনো একটি অনলাইন মিডিয়া ভিত্তিহীন একটি সংবাদ করে দিল, সেটি নিয়ে ভারতেও মাতামাতি শুরু হলো আবার সেটা কপি করে আমাদের এখানে কিছু অনলাইন, কিছু পোর্টাল গুজব ছড়াল। এগুলোর কারণে সমাজে মাঝে মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ব্যাপারে আমাদের উভয় দেশের সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ এ সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তিনি ভারতের সহায়তা কামনা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে জানান এবং অর্থনীতি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বলে দেয় এ দেশ থেকে অর্থনৈতিক কারণে কোনো প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ ঘটার কোনো কারণ নেই।

ভারতীয় সাংবাদিকদের পক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন, ‘আজকের ১০ জানুয়ারি দিনটা শুধু মাত্র বাংলাদেশের কাছে বিশেষ দিন নয়, এটা ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের কাছে একটা বিশেষ দিন। কারামুক্তির পর এই দিনেই স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন। আর এই দিনে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে পেরেছি সে জন্য আমরা অত্যন্ত গৌরবান্বিত।’ এবং এ দিনের ইতিহাসটা আবার মনে করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে সময় বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন কি না দীর্ঘদিন ধরে এটাও একটা সংশয় ছিল। আমরা আমাদের বাবা-মা’র কাছে সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।’

আসামের আঞ্চলিক সংবাদ টিভি চ্যানেল প্রাগ নিউজে’র প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত রাজগুরু তার বক্তব্যে তাদের আমন্ত্রণ করে একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখাবার জন্য তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার ভ্রমণ আমাদের নয়ন খুলে দিয়েছে।’

মতবিনিময় শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ ভারতীয় সাংবাদিকদের জন্য ‘সচিত্র বঙ্গবন্ধু’, ‘সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু’, ‘হিউমেইন বাংলাদেশ’ (Humane Bangladesh), ‘টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশের পর্যটন’ -এই পাঁচটি গ্রন্থের একটি করে সেট কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক এবং দৈনিক আমার আসাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মনোজ কুমার গোস্বামীর হাতে তুলে দেন মন্ত্রী।

কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি ও সম্পাদক এসময় তাদের প্রেস ক্লাব থেকে প্রকাশিত ‘অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ববঙ্গের মহিয়সীরা’ গ্রন্থটি তথ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর কলকাতার সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য সম্পাদিত   ‘শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী ও সচিব।