প্রধান মেনু

পনেরো আগস্ট জাতির ললাটে কলঙ্ক লেপন করেছে—মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা, ৩১ শ্রাবণ (১৫ আগস্ট): ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, পনেরই আগস্টের হৃদয় বিদারক ঘটনা বাঙালি জাতির ললাটে ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকের জাতির কলঙ্ক কালিমা লেপন করেছে। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, তেশরা নভেম্বরের রক্তের প্রবাহ মাস্টার দা সুর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, তিতুমীর আর হাজী শরিয়ত উল্লাহর রক্তপ্রবাহ এক হয়ে মিশে আছে।

আজ ঢাকায় জিপিও মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোঃ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ ফয়জুল আজিম এবং বিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ রফিকুল মতিন বক্তৃতা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ল্যাফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দৃঢ়তার বিভিন্ন ঘটনাবলি তুলে ধরেন।

মন্ত্রী বলেন, সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন, পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন, টিএন্ডটি বোর্ড স্থাপন করেছেন, ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরকে যুগের চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন। বস্তুতপক্ষে একবিংশ শতাব্দীর আজকের জীবনযাপন এবং ৪১ সালে যেখানে বাংলাদেশ পৌঁছাবে তার বীজ বপন করে গেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে আঠারো বছরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ বেয়ে তা অঙ্কুরিত করে বৃক্ষে রূপান্তরিত করেছেন।

মোস্তাফা জব্বার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তুলে ধরে বলেন, ইয়াহিয়া খানের লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের অধীনে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্তরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল বঙ্গবন্ধুর দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন বলার সুযোগ ছিল না। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ বিজয়ে পুরো দেশের সকল জনতা এক হবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাঙালির এই যুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা ক্ষমতা দখল করেই পাকিস্তানি প্রভুদের খুশি করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে এহেন কাজ নেই যা করেননি। একাত্তরের স্বীকৃত রাজাকার শাহ আজিজ, আবদুল আলীম, মাওলানা মান্নানকে বানালেন মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব প্রদান ও একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে করা হয় পুনর্বাসিত। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় দেয়া হয়। দালাল আইন বাতিল করে সাড়ে সাত হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি ও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আসামিদের দেয়া হয় দায়মুক্তি। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুখথুবড়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মাসকেই ষড়যন্ত্রকারীরা বেছে নেয়া হয়। ১৫ আগস্ট ’৭৫ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা করে পরাজিত শক্তির প্রমাণ করেছে তারা কখনও বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারছে না। পৃথিবীর সভ্য সমাজের কাছে আমাদের নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয় এ হত্যাকাণ্ডের প।

এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।

পরে মন্ত্রী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় বেসিস সদর দপ্তরে বেসিস আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।