প্রধান মেনু

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এবার গৃহহীন বৃদ্ধা মনোয়ারা’র জমি দান

মো.ফজলে রাব্বি, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি: নাম তার মনোয়ারা। কাগজে-কলমে মোছা: মনোয়ারা বেগম। বয়স ৬৫ বছর। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগরের হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত মোজাহার আলী প্রামানিকের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী বেড়ের বাড়ি গ্রামে। স্বচ্ছল বাবার ঘরে জন্ম নিলেও দিনমজুর মোজাহারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর অভাবের সংসারে চার ছেলে এবং এক মেয়ের জন্ম হয়। তিন ছেলে ও একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন। তবে এখনও বিয়ে করেনি ছোট ছেলে মুক্তার। ছেলেদের একজন ভ্যান চালক আর অন্যরা দিনমজুর। এর মধ্যে ২০১০ সালে তার স্বামী মোজাহার মারা যান। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মনোয়ারাকে দিনমজুরের কাজ করে ছোট ছেলে মুক্তার দেখা-শুনা করেন।একসময় মনোয়ারা নিজেও মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। তার নিজের কোনো ঘর-বাড়ি নেই। ছোট ছেলের মাটির ঘরে তার বসবাস।
মনোয়ারা জানান, ১৯৯০-৯১ সালে সরকার তার আবেদনে সাড়া দিয়ে হাঁপানিয়া মৌজায় এক একর খাস জমি বন্দোবস্ত করে তাকে দলিল করে দেয়া হয়। প্রভাবশালীদের চাপ আর নিজের অভাব-অনটন এবং অক্ষরজ্ঞান না থাকায় সে জমির সামান্য দখল পেলেও প্রায় পুরো সম্পত্তিই ভোগ করতে পারেননি তিনি।
তিনি জানান, জামনগরের ঝুরমান এবং মমতাজ নামের দুই বৃদ্ধাও তার মতো জমি দখল না পেয়ে অবশেষে জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দান করেছেন। বিষয়টি জেনে তিনিও অনুপ্রাণিত হন। তাই শেষ বয়সে তারও ইচ্ছে হয় জমিটুকু প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দান করার। যেন তার মতো গৃহহীন আরও অনেক পরিবার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়। তার সেই ইচ্ছানুযায়ী ভ‚মি অফিসে যোগাযোগ করেন। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৫ শতাংশ জমি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দানের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন মনোয়ারা বেগম।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) জমির প্রয়োজনীয় দলিলাদি গ্রহণ করেন। দলিল হস্তান্তরের সময় সেখানে জামনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বদিউজ্জামান, বাঁশবাড়িয়া ভূমিহীন সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মোত্তালেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে জমি হস্তান্তর করে বেজায় খুশি মনোয়ারা বেগম। তবে তিনি সরকারের কাছে বাঁকি সম্পত্তি উদ্ধার করে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, এর আগে জামনগর গ্রামের ঝুরমান বেওয়া ৮০ শতাংশ এবং একই এলাকার মমতাজ বেগম ৭১ শতাংশ জমি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দান করেছেন। তাদের দানে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার মনোয়ারা বেগমও ৬৫ শতাংশ জমিদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়ার ইউএনও প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, মনোয়ারা বেগম, ঝুরমান বেওয়া এবং মমতাজ বেওয়া তিন নারীর এই অবদান দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিজেরা গৃহহীন হয়েও গৃহহীনদেন ঘর নির্মাণের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমি দান করেছেন। মনোয়ারা যেহেতু নিজেই গৃহহীন সে কারণে তাকেও একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এর আগে জমিদানকারী ঝুরমান এবং মমতাজকেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদান করা হয়েছে।