বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ২৩ চৈত্র ( ৬ এপ্রিল) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৭ এপ্রিল ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস -২০২২’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ৭ এপ্রিল ২০২২ ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘Our Planet, Our Health’ অর্থাৎ ‘সুরক্ষিত বিশ্ব, নিশ্চিত স্বাস্থ্য’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এবং জনসাধারণকে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি) সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমরা একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সারাদেশে হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্টিং স্টাফের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্যখাতে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও অনুর্ধ্ব-৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার, অপুষ্টি, খর্বতা, কম-ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (৪র্থ এইচপিএনএসপি) এর মোট ২৯টি অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় ২০১৭-২০২২ মেয়াদে সেক্টর ওয়াইড কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নতুন রোগ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত ও দক্ষ ঔষধখাত এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারি পরিস্থিতি মোবাবিলায় আমরা কয়েকটি কর্মপন্থা ও কৌশল অবলম্বন করি, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন প্রদানেও বিশ্বের প্রথম সারির ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্জন করেছে এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, গ্যাভি অ্যাওয়ার্ড ও ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ড।
দেশের সকল মানুষের জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপযোগী দূষণমুক্ত পরিবেশ নির্মাণের মাধ্যমে একটি কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে ‘রুপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবো – ইনশাল্লাহ।
আমি ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস -২০২২’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”