প্রধান মেনু

একজন মানবিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ  অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদের 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ করোনা যখন পুরো বিশ্বকে তছনছ করে দিচ্ছে, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মৃত্যুর কাছে হার মানছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, স্থবির হয়ে পড়েছে জীবন জীবিকা ঠিক সেই সময়েই শুধু জীবন জীবিকার কথা না ভেবে একদল সহযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্নিয়া বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদের। সাথে রয়েছেন এক ঝাঁক মানবতাবাদী চিকিৎসক ।

গত বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ফ্রন্ট লাইন ফাইটার হয়ে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করোনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইফুল্লাহসহ দুজন  অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিষ্ট্রার ডাক্তার, আবাসিক ডাক্তার, ফেলো ডাক্তার এবং শিক্ষানবিশ   ডাক্তার নার্সদের সাথে নিয়ে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদের। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ঢাকাসহ সারা দেশের দূরদূরান্ত থেকে প্রায় ২০০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে জেনারেল ও ওপিডি তে ১৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন।

এছাড়াও নয়টি সাবস্পেশালিটি ক্লিনিকে (যেমনঃ ছানি, কর্ণিয়া, গ্লুকোমাম, রেটিনা) বিশ্বমানের সাব স্পেশালিটি চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করা হয় এবং হাসপাতাল থেকে লেন্সও  ফ্রি দেয়া হয়।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে হাসপাতালটির আউটডোরে সাধারণ রোগীদের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে দশ টাকা মূল্যর টিকেট কেটে হাসপাতালটিতে চক্ষু চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এর সেবা ব্যবস্থা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সরকারীভাবে সকল ধরণের ঔষধ বিনামূল্য প্রদানের  সুষ্ঠু ব্যবস্থপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদেরের জন্ম টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, পড়াশোনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজে । পেশাগত জীবনে উৎকর্ষ সাধন এবং চিকিৎসা সেবার ব্রত নিয়ে এফসিপিএস, এম এস ফেলো কর্নিযায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও ভারতের হায়দ্রাবাদে শর্ট ফেলোশিপ ইন কর্নিয়া, মুম্বাইয়ে ল্যাসিক ও নয়াদিল্লিতে পেড্রিয়াট্রি কর্ণিয়াতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ আছে তাঁর।

আলাপকালে তিনি জানান, কর্ণিয়া বিভাগে করোনাকালীন সময়েও প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখানে একজন রোগী অধ্যাপক পর্যায়ের ডাক্তারের চিকিৎসা সেবাও নিতে পারেন। প্রতিদিন এখানে প্রায় দেড়শ  জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসানেন । এছাড়াও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এ বিভাগের অধীনে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ জন রোগী সার্জারি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

কর্নিয়া বিভাগের আউটডোর রোগীদের ভাইরাল ক্যারাটাইটিস, কর্নিয়াল আলসার, কনজাংটিভিটিস, কেমিক্যাল বার্ন, কর্নিয়াল ইনজুরি, অকুলার সারফেস ডিজিজেস, ড্রাই আই, ক্যারাটোপ্লাস্টি চিকিৎসা দেয়া হয়। আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুকুজ্জামানের সাথে এ প্রতিবেদক  এর কথা হয় ।

তিনি জাতীয় গোয়েন্দা সংবাদকে জানান, কর্নিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদেরের কাছে গত তিন বছর যাবত চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি, এমন একজন বড় মানের চক্ষু বিশেষজ্ঞের আন্তরিক সেবা এবং রোগীর প্রতি তাঁর আন্তরিকতা একজন রোগীর নিকট অনেক বড় বিষয়। মূলত একজন ডাক্তার শুধু চিকিৎসা  সেবা নয় একজন কাউন্সিলরও যা একজন রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার  ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

এখানে কর্নিয়া সার্জারি বিভাগে টেরিজিয়াম সার্জারি, কনজাংটিভাল অটোগ্রাফ কনকজাংটিভাল ফ্ল্যাপ, এন্টোরিরট্রোমাল পাংচার, কোলাজেনক্রস লিংকিং,  সুপার ফেসিয়াল ক্যারাটেকটমি, লিম্বাল টিমসেল গ্রাফট, অ্যামনিওটিকমেমব্রেন গ্রাফটসহ অন্যান্য সার্জারি চিকিৎসা ব্যবস্থা  নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেয়া হয় তার তত্বাবধানে। হাসপাতালটিতে রোগীদের বিনামূল্যে  সকল ধরনের ঔষধ এবং নামমাত্র সার্ভিস চার্জ হিসেবে সিট ভাড়া দিতে হয়।

দেশের  সেরা চিকিৎসকদের নিয়ে কর্ণিয়া চিকিৎসায় রাজধানীর এ চক্ষু হাসপাতালে সকল  ধরণের চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আর কর্নিয়া চিকিৎসায় মাধ্যমে অন্ধত্ব থেকে রক্ষার মাধ্যমে মানুষের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে এই কর্মযজ্ঞে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক ডাঃ.মোঃ.আবদুল কাদেরসহ ফ্রন্ট লাইন ফাইটাররা। প্রয়োজনে রোগীদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন জরুরী প্রয়োজনে যে কোনো সময়ে মোবাইল ফোনে তাঁকে সব সময় পাওয়া যায়।

মহান  পেশা নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলাপকালে প্রফেসর ডাঃ আব্দুল কাদের জাতীয় গোয়েন্দা সংবাদকে  বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮ সাল থেকে চলমান আই হেলথ প্রমোশন অ্যান্ড প্রিভেনশান অব ব্লাইন্ডনেস ইন সিলেকটেড এরিয়াস অব বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রকল্পটির অধীনে ঢাকার অদূরে সাভারে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত বিশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্পের অধীন সাভার, ধামরাই ও ইপিজেড এলাকায় মোট তিনটি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার, স্থাপনের কাজ শেষ । এই ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে চক্ষু রোগীরা বিনামূল্যে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুব শীঘ্রই  শুরু হবে এই হাসপাতালগুলোর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ফলে এ এলাকায় চক্ষু চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সূচিত হবে।

বর্তমান সরকার সকল জনগণেরস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে প্রকল্পের অধীন নতুন এ ধরণের হাসপাতাল স্থাপন বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি চক্ষু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবদুল কাদের তিনি বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সাবেক মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্নিয়া অ্যান্ড রিফ্র্যাক্টিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ।