প্রধান মেনু

ইজিবাইক চালক খুনের মামলার রহস্য উদঘাটন, আলামত উদ্ধার ও ৬ আসামি গ্রেপ্তার

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের রাকড়া গ্রামের একটি ধান ক্ষেতের পাশে ইজিবাইক চালক ইকরামুল ইসলাম (২৬)কে রাতের আধারে নৃশংসভাবে খুনের কালিগঞ্জ থানার মামলা নং-১২,তারিখ-১৯/১০/২০২১ খ্রিঃ এর মামলার রহস্য উদঘাটন আলামত উদ্ধার এবং ৬ আসামী গ্রেপতার বিষয়ে শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম।

শুক্রবার ভোররাতে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। এ সময় ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকসহ তাদের হেফাজতে থাকা ৬টি মোবাইল সহ হত্যাকাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। মদের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে ইজিবাইক চালক ইকরামুল ইসলামকে খুন করা হয়। হত্যাকান্ডের পর ৮ দিন সে নিখোঁজ ছিল। ইকরামুল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইসলাম মোল্যার ছেলে। গত ১৯ অক্টোবর কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের রাকড়া গ্রামের একটি ধান ক্ষেতের পাশ থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়। মামলা দায়ের পর পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া হত্যাকাজে ব্যবহৃত ছুরি ও ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, আসামীদের দেওয়া তথ্য মতে তাহারা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ইং- ১২/১০/২০২১ তারিখ আসামি মোহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম নাঈম পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখার কথা বলে প্রথমে ভিকটিমের ইজিবাইক ভাড়া করে। পরে আসমি শামীম ও পলাতক আসামী আশরাফুলকে ঝিনাইদহ থানাধীন পাগলাকানাই মোড় হতে ইজিবাইকে তুলে নেয়।

আসামি শামীম আসামি তানভীর এর মোবাইল দিয়ে আসামি রাশেদের সাথে যোগাযোগ করে তাকে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন এর সামনে থেকে তুলে নেয়।বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে ভিকটিমকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি পান করিয়ে নলডাঙ্গা বাজার হতে ধারালো চাকু ক্রয় করে কলীগঞ্জ থানাধীন কোলা ইউনিয়নের বাকড়া গ্রামস্থ রাস্তার উত্তর পাশে জনৈক আব্দুর সত্তারের ধানক্ষেতের পাশে ১২/১০/২০২১ ইং তারিখ রাত অনুমান -২১.৩০ ঘটিকা হতে ২২.০০ ঘটিকার মধ্যে ধারালো চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে লাশ উক্ত স্থানে ফেলে ভিকটিমের ইজিবাইক নিয়ে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আসামী বাপ্পির বাসায় চলে যায় এবং যাওয়ার পথে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন অজ্ঞাত স্থানে ফেলে যায়। আসামি বাপ্পি এর বাড়িতে রাত যাপনের পর দিন ইজিবাইকটি আসামি মোঃ সাগর এর নিকট ৬০,০০০ টাকা বিক্রি করে টাকা বন্টন করে যার যার মত চলে যায়।

পরবর্তীতে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত ০৬ জন আসামিকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে এবং তাদের হেফাযত হতে একটি ইজিবাইক এবং হত্যা কাজে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়। কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, ইজিবাইক চালক হত্যা মামলাটি ছিল ক্লুলেস। এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর থানায় ইকরামুলের ভাই রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ তথ্য প্রযুুক্তি ব্যবহার করে তিনদিনের মধ্যে হত্যার সাথে জড়িত ৬ আসামিকে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও কালীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হচেছ তানভিরুল ইসলাম নাঈম (২৩)। সে পীর গোপালপুর গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দীন মোল্লার ছেলে। তাকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা বাজার থেকে আটক করা হয়। সে মামলার ১নং আসামি। মামলার ২নং আসামি শামীম হোসেন (২৪) কে ঝিনাইদহ বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ঝিনাইদহ সদর থানার চাঁন্দেরপোল গ্রামের মৃত আব্দুল বারেক বিশ্বাসের ছেলে। মালমলার ৩য় আসামি রাশেদ আলী (২৬) কে কুষ্টিয়া সদর থানাধীন মিলপাড়া রেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেও ঝিনাইদহ সদর থানার চাঁন্দেরপোল গ্রামের মৃত
নজরুল ইসলামের ছেলে।

মামলার ৪নং আসামি বাপ্পি হোসেন (২৬) গ্রেপ্তার করা মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার দক্ষিন ছান্দড়া গ্রাম থেকে। সে ওই গ্রামের আরুজ আলী মন্ডলের ছেলে। মামলার ৫ম আসামি সাগর মোল্লা ওরফে সৈকত (৩১)কে গ্রেপ্তার করা হয় মাগুরার শালিখা বাজার থেকে। সে শালিখা উপজেলা কাতলী গ্রামের মৃত ইউনুচ আলী ছেলে। মামলার ৬ নং আসামি জাকির হোসেন (২৭) কে গ্রেপ্তার করা হয় কালীগঞ্জ রেলগেট থেকে। সে কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল আাজিজের ছেলে।

ওসি আরো জানান, পুজা দেখার কথা বলে তারা ইকরামুলের ইজিবাইক ভাড়া নেয় এবং বিভিনন জায়গা থেকে আসামিরা ইজিবাইকে উঠে। অভিযানের সময় আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আলামত হিসেবে ভিকটিমের ইজিবাইক ও হত্যা কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৬০ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি বিক্রি করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের শুক্রবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।