মানুষ মানুষের জন্য

মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ অসহায় করোনা আক্রান্ত রোগিদের হাতে অক্সিজেন ও চিকিৎসা সামগ্রী তুলে দেওয়ার অনন্ত চেষ্টার খ- দৃশ্যগুলো যখন চোখের সামনে, ঠিক তখনই কানে ভাসে গানে গানে মানবতার কথা বলা ভূপেন হাজারিকার এ কালজয়ী গানটি। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জিবনের জন্য। অক্লান্ত পরিশ্রম আর মানবতা সেই সাথে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকেই নিরলসভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন মেহেরপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “বন্ধু জরুরী স্বাস্থ্য সেবা”।
কোন কিছুরই চাওয়া পাওয়া নেই তাদের। শুধু সুস্থ রোগীর এক চিলতে হাসি আর মহামারী মুক্ত দেশ চান এরা। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যেমন বেড়েছে রোগীর সংখ্যা, ঠিক তেমনি সংকট দেখা দেয় অক্সিজেন ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী। বিত্ত্বশালীরা এসব অনুসঙ্গ যোগাড় করতে পারলেও স্বল্প আয়ের মানুষেরা পড়েন বিপত্তিতে। অনেকেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরেছেন।
মৃত্যু যন্ত্রণা আর স্বজন হারানোর কান্নায় বিবেক তাড়িত হয়ে মাগুরা মহিলা কলেজ প্রভাষক ও গাংনীর ধর্মচাকী গ্রামের উদ্যোমি যুবক মাসুদ পরিকল্পনা করেন কীভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়? সাথে যুক্ত হন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী মো: আহসান হাবিব। দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে যাত্রা শুরু। এতে সুফলও আসে। পরবর্তীতে গাংনী পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০১ ও ২০০৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, গাংনী কাথুলী মোড়ের শুভাকাঙ্খি এবং দেশ ও প্রবাসে অবস্থানরত শুধী জনেরা এই উদ্যোগে শরীক হন।বর্তমানে নিজেদের প্রচেষ্টা আর বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় কেনা ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ব্যাক্তি মালিকানায় থাকা অব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে করোনাক্রান্ত অসহায়দের সেবা দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধু জরুরী স্বাস্থ্য সেবা’।
এছাড়াও যাদের পালস অক্সিমিটার কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকেও সরবরাহ করা হচ্ছে এ অনুসঙ্গটি। তবে একটিই শর্ত রোগী সুস্থ হলে অক্সিমিটারটি ফেরত দিতে হবে।সংগঠনটি ইতোমধ্যেই আরো একটি পরিসেবা হাতে নিয়েছে। যারা জরুরী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না, তাদেরকে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পৌছে দেয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি জনগণের মধ্যে করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ‘সচেতনতামূলক অনলাইন পোস্টার’ প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।‘বন্ধু জরুরী স্বাস্থ্য সেবা’ গাংনী এলাকায় স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও এর সেবা বিস্তৃত।
মেহেরপুরের প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে কর্মী রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত অসহায় রোগীদের। জরুরী ফোনকল পেলেই চিকিৎসা সেবার যন্ত্রপাতি তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।গাংনীর বসুন্ধরা পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও ঠিকাদার মকলেচুর রহমান জানান, তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে ‘বন্ধু জরুরী স্বাস্থ্য সেবা’ সংগঠনের কর্মীদের কাছে ফোন করেন। সাথে সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে যায়। তিনি এখন বেশ সুস্থ্য রয়েছেন।একই ভাবে হোমিও চিকিৎসক হরেন্দ্রনাথ, থানাপাড়ার নুরজাহানসহ অনেকেই সংগঠনের সকলকে প্রশংসা করেন। করোনাক্রান্তদের পাশে তাদের মতো অনেকেরই এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তারা। সংগঠনটির উদ্যোক্তা মাসুদ ও অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব জানান, কোন কিছুর বিনিময়ে নয় বিবেক, মানবতা আর দ্বায়বদ্ধতা থেকেই এ সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এতে বেশ সাড়াও মিলেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক করোনা রোগির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তারা। সুস্থ রোগী আর তার স্বজনদের কাছে কিছুই চাওয়ার নেই। তার মুখে হাসি ফুটলেই আমাদের এ পরিশ্রমের স্বার্থকতা।গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. এমকে রেজা জানান, সংগঠনটি যে কাজ করছে তা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এদের কারণে অসহায় রোগীরা সেবা পাচ্ছেন। বেঁচে যাচ্ছে জীবন। তাছাড়া টেলিমেডিসিন ও অনলাইন পোস্টার প্রচারণা হাতে নিয়েছেন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম।
মানবতার সেবাই নিয়োজিত এ সংগঠনটির কার্যক্রম আরো প্রসারিত হোক এ কামনা করেন তিনি।গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, করোনাক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। সরকারের পাশাপাশি অনেকেই পরিসেবা দিচ্ছেন।এ সংগঠনটির মতো যারা বিত্তবান তাদেরকেও এগিয়ে আসা উচিৎ।