বেলকুচিতে কথিত প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রী নিহত

মোঃ ইফতেখার আলম, রিপোর্টার, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচির শোলাকুড়া গ্রামে কথিত প্রেমিক সঞ্জয় সরকারের (১৮) ছুরিকাঘাতে পূজা সরকার (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৩ মে) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পূজা সরকার একই গ্রামের পবিত্র সরকারের মেয়ে। নিহত পূজা সরকার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
সোমবার সকালে পূজা বাড়ির উঠানে কাজ করছিল, এমন সময় পেছন থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে উপুর্যুপরি আঘাত করেন সঞ্জয়। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। তবে হাসপাতালে নেয়ার পথেই পূজা মারা যান।
এ সময় সঞ্জয়ও ওই ছুরি দিয়ে নিজেকেও আঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আহত হন। লোকজন আসলে সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, সঞ্জয় সরকারের সঙ্গে পূজার দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি চলছিল। এদিকে অন্যত্র বিয়ের ব্যাপারে পূজার বাবা সিদ্ধান্ত নেন। এতে সঞ্জয় ক্ষিপ্ত হন।
ওসি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা পবিত্র সরকার বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূজার সাথে সঞ্জয়ের সাথে প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিলোনা ৷ সঞ্জয় একতরফাভাবে পূজাকে উক্ত্যক্ত করে আসছিলো। কিছুদিন পূর্বে থেকে পূজার বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো, তবে মেয়ে নাবালিকা ভেবে সেপথে আর অগ্রসর হননি পূজার পরিবার বলে জানান পূজার প্রতিবেশী শ্রী বাবুরাম সরকার৷ তবে বিয়ের কথা শুনেই সঞ্জয় নিজেকে বিয়ে করতে পূজাকে চাপ দিলে পূজা রাজি না হওয়ায় ক্রোধে সঞ্জয় এ ঘটনা ঘটায় বলে জানান প্রতিবেশীরা৷
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের প্রতিবেশী সোহাগপুর এস.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক বাবু সাধন চন্দ্র বলেন, ঘটনাটি আসলে একেবারে অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা৷ আমি সকালে বাজার থেকে ফিরে বাজারের ব্যাগটা রাখতেই হটাৎ চিৎকার শুনতে পাই। তারপরে বের হয়ে দেখি অভিযুক্ত ছেলেটি হাতে চাকু নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে।
এরপরে আমি নিহত মেয়েটির বাসায় গেলে মেয়েটির স্বজনেরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আমি ঘটনা শুনে মেয়েটি সুস্থ হয়ে যাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তাদেরকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। ততক্ষণে মেয়েটিকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিলো। তারপরে আমি ছেলেটির বাসায় গিয়ে দেখি ছেলেটি আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। ছেলেটির বাবা নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাকে নিয়ে তার সংসার।
এরকম ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এরকম একটি ঘটনা দিনে দুপুরে হবে বলে তারা মেনে নিতে পারছেন না। নৈতিকতা, পারিবারিক বা সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই অল্প বয়সী ছেলেময়েরা এ ধরনের প্রবৃত্তিতে ঝুঁকে পরছে। এসব রোধে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে পরিবার, সকলে মিলে এখনই বিশেষ যত্ন না নিলে পরিস্থিতি দিনদিন আরও ভয়াবহ হবে।