শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের রাষ্ট্রীয় সফর

ঢাকা, ৬ চৈত্র (২০ মার্চ) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গতকাল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। গতকাল প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় বিশেষ সম্মানিত অতিথি হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন শ্রীলংকার কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল।
প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে আজ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক দিক, বিশেষতঃ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিবিধ অঙ্গনে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো সংহত করতে ফরেন অফিস কনসালটেশনস, বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক ও বিভিন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপসহ বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোসমূহের অধিকতর সক্রিয়করণের বিষয়ে এবং বিস্তৃত পরিসরে সহযোগিতার বলয় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে Joint Commission for Comprehensive Cooperation প্রতিষ্ঠায় সম্মত হন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। মহামারিজনিত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সফরে আসায় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনার বৈরী প্রভাব মোকাবিলা করে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উত্তরণের সকল মানদণ্ড সফলভাবে পূরণ করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিলের আওতায় শ্রীলঙ্কায় সহায়তা প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে দুই নেতা গুরুত্বারোপ করেন। শ্রীলংকার সাথে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে বাংলাদেশ আগ্রহী। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিপিং কানেক্টিভিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বৈঠকে চট্টগ্রাম-কলম্বো ফিডার সার্ভিস পরিচালনা এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, দ্বৈত কর পরিহার ও কাস্টমস সহযোগিতার বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধপণ্য অধিক পরিমাণে আমদানির জন্য শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে শ্রীলঙ্কা হতে বর্ধিত বিনিয়োগেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য, কৃষি, বিশেষতঃ ধান উৎপাদন, জলবায়ু অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আইটি সেক্টরে শ্রীলঙ্কাকে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দেবে। অন্যদিকে, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও নার্সিং সেক্টরে শ্রীলঙ্কা হতে সহযোগিতা পেতে বাংলাদেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে যুব উন্নয়ন ক্ষেত্রে একটি নতুন সমঝোতা স্মারক এবং কৃষি গবেষণা, নার্স প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষা, থিংক ট্যাংক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি বিষয়ক পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক ইন্সট্রুমেন্ট নবায়ন হয়েছে।
বৈঠকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে চলমান সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর বিস্তারিত প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য শ্রীলঙ্কাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।