প্রধান মেনু

জাতীয় বীমা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ১৫ ফাল্গুন (২৮ ফেব্রুয়ারি): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ১ মার্চ ‘জাতীয় বীমা দিবস’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :“সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর বীমা পেশায়  যোগদানের স্মৃতি বিজড়িত ১ মার্চ ‘জাতীয় বীমা দিবস’ পালন হচ্ছে  জেনে আমি আনন্দিত। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে বীমা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, বীমা  হোক সবার’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

জাতীয় অর্থনীতিতে বীমার গুরুত্ব এবং এর অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাধীনতার পর বীমা শিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বীমা  কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামক ৪টি বীমা কর্পোরেশন গঠন করেছিলেন। একই সঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জাতীয় বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন। পরবর্তীতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে ‘ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন আইন-১৯৭৩’ প্রণয়ন করে এই ৪টি কর্পোরেশনকে ভেঙ্গে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ এবং ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ নামে দু’টি পৃথক বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন। এ দু’টি কর্পোরেশন এখনও দেশে বীমা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে  দেশের জনগণকে বীমা সেবা দিয়ে আসছে। বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বীমা অধিদপ্তর গঠন করেন।

বীমা শিল্পের উন্নয়নে জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বীমার গুরুত্ব ও সুফল জনগণের নিকট পৌছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পুরাতন বীমা আইন-১৯৩৮  কে রহিত করে সময়োপযোগী ‘বীমা আইন-২০১০’ এবং ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০’ প্রণয়নপূর্বক তৎকালীন বীমা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়। ‘জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা খাতের বিকাশে আমাদের সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী বীমা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি  মোকাবিলায় হাওড় এলাকায় সীমিত পরিসরে  আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা চালু করা হয়েছে।

বীমা গ্রাহকদের স্বার্থসংরক্ষণের লক্ষ্যে State of the art technology সম্পন্ন Unified Messaging Platform (UMP) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বীমা ঝুঁকি আবরণ ও পুনঃবীমা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বিশেষ অবদান রাখার পাশাপাশি বীমার প্রসার এবং বীমাশিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বীমা বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পেশাদার একচ্যুয়ারি তৈরির জন্য বিদেশে শিক্ষার্থী প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, জীবন বীমা কর্পোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অটোমেশনের জন্য ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের  বীমা খাতের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।

আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বীমা খাতও এই অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত আজকের এই দিনে বীমার শুভবার্তা দেশের সকল নাগরিকের নিকট পৌঁছে যাক, দেশের সকল মানুষ এবং সম্পদ বীমা সেবার আওতায় আসুক –এই প্রত্যাশায় আমি জাতীয় বীমা দিবসের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।”

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”