প্রধান মেনু

মাতারবাড়ীতে ভিড়েছে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ

ঢাকা, ১৫ পৌষ (৩০ ডিসেম্বর) : কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ী বন্দর জেটিতে গতকাল প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে। পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প’ গতকাল ভোরে ইন্দোনেশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের শক্তিশালী টাগবোট ‘কান্ডারী-৮’ এর সহায়তায় জাহাজটি মাতারবাড়ী বন্দর জেটিতে আনা হয়।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলের গভীরতা বেশি থাকায় জোয়ারের জন্য বহির্নোঙরে অপেক্ষা না করেই জাহাজটি সরাসরি জেটিতে ভিড়তে সক্ষম হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জাহাজে ৩১৩টি প্যাকেজে ৭৩৬ টন স্টিল স্ট্রাকচার আনা হয়েছে। গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য বঙ্গোপসাগরে ২৫০ মিটার প্রস্থ ও ১৮ মিটার গভীরতার চ্যানেল এবং জাহাজ চলাচলের পথ নির্দেশনার জন্য ছয়টি ‘বয়া’ স্থাপন করা হয়েছে।

সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের উপর অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং ব্যাপক সংখ্যক জাহাজ এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী বন্দর সড়ক, রেল ও নদীপথ দিয়ে সংযুক্ত থাকবে।

বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত কানেক্টিভিটি গড়ে উঠবে। যার ফলে যেকোন পণ্য সহজে এবং কম খরচেই পৌঁছে যাবে আমদানি-রপ্তানিকারকেদের দোরগোড়ায়। এ বন্দর দিয়ে কয়লা, লিক্যুয়িড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), অপরিশোধিত তেল ও তেলজাত পণ্য, সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, সার, খাদ্যশস্য, স্টিলপণ্য এবং স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি সহজতর হবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি – জাইকা এর অর্থায়নে মাতারবাড়ী বন্দরটি নির্মিত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল ২ হাজার ২১৩ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী বন্দরের অংশ এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সড়ক অংশ বাস্তবায়ন করবে।

মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ নির্মাণ বিষয়টি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১০ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং অন্যান্য অবকাঠামোসহ নির্মাণ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক বন্দর।

এখানে বিপুল অংকের বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে, নতুন গতি আসবে সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। ভূ-অবস্থানগত সুবিধা এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা থাকায় বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে। এ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।