আবাসিক এলাকায় অটো রাইস মিল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,০৭ নভেম্বর ২০২০ঃ ঝিনাইদহে প্রশাসনের নিরবতায় আবাসিক এলাকায় অবাধে গড়ে উঠছে অটো রাইস মিল। সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আরেকটি মিয়া অটো রাইচ মিল গড়ে উঠায় পরিবেশ হুমকির মুখে। বিষয়খালি এলাকায় ২টি অটো রাইস মিল যে যার মতো করে স্থাপন করছে। সরকারী নীতি অনুসারে অটো রাইস মিল করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প সনদ, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ফুড লাইসেন্স এবং চকিদারি খাজনা রশিদ প্রদান করে অটো রাইস মিল স্থাপন করতে হয়।
এ ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা ব্যতিরেকে অটো রাইস মিল স্থাপন করতে হয়। কিন্তু বিষয়খালিগ্রামে কোন নিয়ম নীতি ছাড়াই অবাধে গড়ে উঠছে অটো রাইস মিল। সদর উপজেলার ৭নং মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালী গ্রামের ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ রোডে মিয়া অটো রাইচ মিল নির্মানাধিন অটো মিল বন্ধের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জে রোডের কাছে মিয়া অটো রাইচ মিল নামে কারখানার ভবনের কাজ শুরু হয়েছে যার পানি নিষ্কাশনের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। আবাসিক এলাকায় এবং ফসলি জমিতে পানি নিষ্কাশন করা হবে। সর্বশান্ত হবেন কৃষক, সবুজ ফলের গাছ মারা যাবে। চাষ যোগ্য জমি অনাবাদি হবে। চেয়ারম্যান খুরশিদ আলমের আপন ভাই সাজেুদুল ইসলাম সাজু উক্ত কারখানাটি নির্মাণ করছেন। ইসলামী ব্যাংক,ঝিনাইদহ শাখার তত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
তবে এলাকার জনসাধারণ,ধানী জমি রক্ষার্থে এবং পরিবেশ দুষনের কারণ দেখিয়ে এই কারখানা নির্মানে বাধাঁ সৃষ্টি করছে। তাদের দাবী,৯০ শতক জমির উপর এই কারখানাটির নির্মাণ কাজ শুর হয়েছে।এই কারখানার ফলে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়া শব্দদূষণ ও বায়ু দুষনের কারণে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। এই বিষয়ে কারখানাটির পাশে বসবাসকারী অধিবাসীদের সাথে কথা বললে,তারা উক্ত কারখানাটা নির্মানের চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
কারখানার পাশেই বসবাসকারী মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন,আমাদের বাড়ীর পাশেই অবস্থিত সাদমান অটো রাইচ মিলের কারণে আমরা অনেক ক্ষতিকর অবস্থায় জীবন যাপন করছি।এই অটো রাইচ মিলের কারণে সব সময় বিকটভাবে শব্দ হতে থাকে।এই অটো রাইচ মিল থেকে আসা ছাইয়ের কারণে প্রতি বছর আমাদের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।কারখানা দুষিত পানির কারণে কারখানার পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় অনুরুপ আরেকটি অটো রাইচ মিল একই এলাকায় হলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিবে।
এলাকাবাসী জানান, এই এলাকাটি বিসিক শিল্প নগরী এর আওতাধীন নয়, তা জানা সত্বেও মহারাজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খুরশিদ আলমের আপন ভাই ব্যবসায়ী সাজেুদুল ইসলাম সাজু এই এলাকায় বসতবাড়ী সংলগ্ন ফসলি জমির উপর অটো রাইস মিল তৈরী করছেন। এই অটো রাইস মিল তৈরীর করে উৎপাদন শুরু হলে উক্ত মিলের ছাই, ধূলা, মিলের পানি এবং মিলের শব্দের কারণে এলাকাটি বসবাসের অনুউপযোগী এবং ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে জানান তারা।
স্থানীয় বসবাসকারি খলিল উদ্দিন ও করিম সরদার বলেন, এই অটো রাইস মিলের ফলে পাশের আবাদী জমি ফসল, আম গাছ ও বিভিন্ন রকমের গাছ, এলাকার পানি নষ্ট হয়ে যাবে। এসব আবাদি জমির উপর আবাদ করে অনেক লোক জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব দূষণের কারণে এলাকার মানুষজন বিভিন্ন রোগের সম্মুখিন হবে এবং এই এলাকায় ছোট ছোট বাচ্চারা ছাই ও ধূলার কারণে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে চোখে ছাই পড়বে এবং খেলাধুলা করতে পারবেনা।
এই এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। এই অটো রাইস মিল তৈরী হলে অত্র এলাকায় পরিবেশ এতটাই দূষিত হবে যার ফলে এলাকার লোকজন বিভিন্ন রকম ভোগান্তি ও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই এই উপরোক্ত জমির অটো রাইস মিল স্থাপনে বন্ধের দাবিতে আমরা আগামীতে মানববন্ধনসহ মিছিল সমাবেশ করার আহবান করেছি।
কাট ব্যবসায়ি মুস্তাক আহমেদ,মফিজুল ইসলাম ও আক্কাচ আলীর স্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা এই অটো রাইচ মিলের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের বরাবর এলাকার জনসাধারণের স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্ত প্রেরণ করেছি।এছাড়াও মাননীয় এম.পি মহোদয় বরাবর, এবং পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর দরখাস্ত প্রেরণ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এমনকি অটো রাইস মিল বন্ধের দাবি প্রদান করায় এলাকাবাসীকে মিল মালিক কত্রিক অনেক রকমের সমস্যার সমুক্ষিন হতে হচ্ছে বলে জানান তারা। নতুন নতুন অটো রাইস মিল স্থাপনে এলাকাবাসী বাধা দিলেও প্রশাসন নিরব থাকায় কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বিষয়খালী এলাকার ভূক্তভূগি জনগণ। এ বিষয় নিয়ে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ এসব বিষয়ে কোন প্রতিকার না নেয়ায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে মিয়া রাইচ মিলের মালিক চেয়ারম্যান খুরশিদ আলমের আপন ভাই সাজেদুল ইসলাম সাজুর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি। মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলমের সাথে যোগাযোগ করলেও তার সাক্ষাত মেলেনি।