প্রধান মেনু

শীতের আগমনী বার্তায় গাছ পরিচর্ষায় ব্যস্ত গাছিরা

মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ শীতের সকালে এক গ্লাস মিষ্টি খেজুরের রস বহুকাল ধরেই বাঙালির রসনাবিলাসের এক অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। শীত এলেই গাছিরা বেশ নড়ে চড়ে বসেন। তবে এবার একটু দেরীতে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গাছ পরিচর্যার কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মেহেরপুরের গাংনী এলাকার গাছিরা। গাছের পাতা ও গাছের গোছালি কেটে রস সংগ্রহের জন্য পরিচর্যা করছেন। গাছ পরিষ্কার আর নলি বসানোর কাজে নেমেছেন তারা। কয়েকদিন পরই সংগ্রহ করা হবে সুমিষ্ঠ রস। তৈরী হবে গুড়।

গাংনী এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে নেই খেজুরের বাগান। তার পরও পুকুর পাড় ও প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশে রয়েছে খেজুর গাছ। এসব গাছে খেজুর না ধরলেও পাওয়া যায় সুমিষ্ঠ রস। সেই রস পান করা ছাড়াও তৈরী হয় নানান ধরণের পিঠা পায়েস। আর গুড়ের তৈরী হয় নানা জাতীয় মিষ্টি। তবে অনেকেরই বাড়ির গাছ খেয়ে ফেলেছে ইটভাটায় ফলে রস সংগ্রহ করতে না পারায় অনেক গাছি হয়ে পড়েছে বেকার।গাংনীর যুগির গোফা গ্রামের নারায়ণ গাছি জানান, গত পাঁচ বছর আগেও এলাকার অন্তত হাজার খানেক গাছ কেটে রস নামানো হতো।

কিন্তু অনেকেই ভাটা মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়ায় এখন গাছের সংখ্যা কমে গেছে। আগে শীত মৌসুমে রস বেচে ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করা হতো। এখন আর আগের মতো গাছ নেই তাই আয়ের অংক কমে গেছে। তার পরও এবার আড়াই শতাধিক গাছ পরিচর্যা করা হয়েছে। নলি বসানো হয়েছে অন্তত দেড়শ গাছের। দিন পনের পরে রস সংগ্রহ করা হবে। প্রথম প্রথম রস কম হবে। পর্যায় ক্রমে রস বাড়বে। অনেকেই রস কিনে তা গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে সংসারের ব্যায় বহন করেন। আবার নিজেরাই রস জালিয়ে গুড় তৈরী করে তা বাজারজাত করেন।

শিমুলতলা গ্রামের হারান গাছি জানান, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তারপরও শীতের মৌসুমে গাছ পরিচর্যা করে রস নামানোর চেষ্টা করা হয়।প্রতিটি গাছ শীত মৌসুমের জন্য দেড়শ টাকা থেকে দুশো টাকায় কিনে নেয়া নেয়া হয়। এতে বেশ লাভ হয়। এবার দেরীতে শীত আসার কারণে গাছ পরিচর্যাটাও দেরীতে করা হচ্ছে। সূর্যের গতিবেগ ও গাছের রসের ভান্ডার অনুমান করে সেই দিকে গাছ কাটা হয়। বসানো হয় নলি। ঠিলে বেধে রস সংগ্রহ করার সময় খেয়াল রাখতে হয় যে কোন পাখিতে রস না খেয়ে ফেলে। আবার অনেক সময় নিশি কুটুম্বরাও রস চুরি করে নেয়। একই কথা জহানালেন নয়ন গাছি।

গাংনী মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রমজান আলী জানান, খেজুর গাছ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে তাই শীতের সকালে সোনালী রোদের সাথে মিষ্টি খেজুরের রসের স্বাদ আজ ভূলতে বসেছে চিরচেনা জনপদের মানুষরা। তবুও যে গাছ গুলো এখনও নিরবে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোকে নিয়েই যেন গাছিদের শুরু হয়েছে অন্য রকম ব্যস্ততা।বামন্দী বাজারের গুড় ব্যবসায়ি সুমন জানান, এ অঞ্চলের খেজুরের গুড় ও পাটালীর খ্যাতি রয়েছে।

৯০ এর দশকে এ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গুড় রপ্তানী করা হতো। এখন গাছের সংখ্যা কমে গেছে ফলে আগের মতো আর গুড় তৈরী হয় না। তবুও দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা আসেন গুড়ের চাহিদা দিতে।এবারও ঢাকা মানিকগঞ্জ ও শরিয়তপুর থেকে বেশ চাহিদা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে গাছিদের কাছে বলা হয়েছে।