প্রধান মেনু

বিশ্ব বসতি দিবসে রাষ্ট্রপতি বাণী ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঢাকা, ১৯ আশ্বিন (৪ অক্টোবর) :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৫ অক্টোবর ২০২০ জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Housing For All: A Better Urban Future’ তথা ‘সবার জন্য আবাসন: ভবিষ্যতের উন্নত নগর’। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের আবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম ক্রমাগতভাবে দূর করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নাগরিকদের আবাসন সমস্য দূরীকরণে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবার জন্য পরিকল্পিত আবাসনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের উন্নত নগরায়ন নিশ্চিতকরণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকার এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নগর আবাসন নিশ্চিত করতে অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের জেলা শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্লট ও ফ্ল্যাট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কোনো নাগরিকের যাতে বস্তিতে বসবাস করতে না হয় সেজন্য সরকার বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। বস্তিবাসীদের জন্য ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে আবাসন খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় এবং সুপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য ‘জাতীয় আবাসন নীতি-২০১৭’ এবং ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন- ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গৃহায়ন নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-১১’ অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রামে শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ, রেল সংযোগ বৃদ্ধি, ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং, কৃষি ও আবাসনের জমির মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষার উদ্দেশ্যে শহরগুলোতে মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুতকরণসহ বহুমাত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

২০০৭ সাল থেকে বিশ্বে অর্ধেকেরও বেশী মানুষ নগরে বাস করে যা ২০৫০ সালে বেড়ে দুই তৃতীয়াংশে পরিণত হবে। তাই শহরে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে জমির ব্যবহারে ও ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও নগর পরিকল্পনার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ নজর দিয়ে আবাসন সমস্যা সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার জন্য টেকসই আবাসন নিশ্চিত করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আরো উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি। আমি ‘বিশ্ব বসতি দিবস-২০২০’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।   জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন : “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এ বছর বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘Housing for all: A better urban future’ তথা ‘সবার জন্য আবাসন: ভবিষ্যতের উন্নত নগর’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। আবাসন মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। এর সাথে মানুষের রুচি, সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভৌগলিক অবস্থানসহ নানা উপাদান জড়িত থাকে। তাই আবাসন মানুষের আকাঙ্ক্ষার সাথে মানানসই, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত হওয়া আবশ্যক। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গ্রামকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূরীকরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার প্রত্যেক গ্রামে শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১): রূপকল্প ২০২১’ এ আবাসন ও অন্যান্য নাগরিক সেবার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নগর উন্নয়ন কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিবেশ, মৌলিক পরিষেবা এবং নগরায়নের স্থানিক মাত্রা মোকাবিলার মাধ্যমে আবাসনের যোগান নিশ্চিতকরণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আবাসনখাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উন্নততর নগরায়ণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।

বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে বিপুল সংখ্যক মানুষ বস্তিসহ অপরিকল্পিত ও অনানুষ্ঠানিক জনবসতিতে বসবাস করে থাকে। এ বিপুল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধার বাইরে থাকে। আমি আশা করি সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য আবাসন নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। আমি ‘বিশ্ব বসতি দিবস ২০২০’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।   জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”