প্রধান মেনু

প্রকাশ্যে চলছে লাশ নিয়ে ব্যবসা।।নেপথ্যে চেয়ারম্যান

শেখ মোঃ আকরাম হোসেন কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি:  কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নিমাই চন্দ্র হালদারের (৭০) লাশ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যবসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।আর এর নেপথ্যে থাকার অভিযোগ উঠেছে যদুবয়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।নিহত ব্যক্তি যদুবয়বা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মৃত তারাপদ হালদারের ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ সন্ধা সাড়ে ৬ টায়  নিহত নিমাই চন্দ্র হালদার মাছ বিক্রি শেষে বাইসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয় সম্মুখ পৌছালে একই ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আবু তৈয়বের ছেলে তরুন হোসেন (৩৩) বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক দিয়ে স্বজরে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন আহত অবস্থায় নিমাই কে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর থেকেই যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম,স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মান্নান মোল্লাসহ কতিপয় প্রভাবশালী সংখ্যালুঘু নিহতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকে লাশ পোষ্ট মোর্টেম ও আইনের আশ্রয় না নেওয়ার জন্য।চাপাচাপির এক পর্যায়ে পরের দিন ১৬ মার্চ সকাল ৮ টায় চৌরঙ্গী বাজারের রহমতের দোকানের সামনে প্রায় তিনশ জনগনের উপস্থিতিতে এক সালিশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সালিশে চেয়ারম্যান শরিফুল আলম নিহতের পরিবারকে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় অভিযুক্তকে।অভিযুক ব্যক্তি তরুন সাথে সাথে এক লক্ষ টাকা চেয়ারম্যানকে দেয় এবং বাকী দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করবে এই মর্মে অলিখিত অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।এরপর চেয়ারম্যান আদায়কৃত এক লক্ষ টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার জামানত হিসেবে রেখে অবশিষ্ট পঞ্চাশ হাজার নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বলেন লেখালেখি দরকার নেই।মুখের কথায় আইন এবং ঐদিন বিকেলে নিহতের মরাদেহ সৎকার করা হয়।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে অবশিষ্ট দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়নি।অভিযুক্ত ব্যক্তি টাকা দিবেনা এই মর্মে হুমকি ধামকি দিচ্ছে আর চেয়ারম্যান কোন দায়িত্ব না নেওয়ার কথাও জানিয়েছে।এখন সংখ্যালুঘু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার নিরুপায় হয়ে দ্বারেদ্বারে ঘুরছে অর্থ আর বিচারের জন্য।
এবিষয়ে নিহতের ছেলে রাজীব বলেন, মোটরসাইকেলের স্বজরে আঘাতে আমার বাবার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান, মেম্বর ও স্থানীয়দের নিয়ে চৌরঙ্গী বাজারে সমাঝোতা করার জন্য সালিশী বৈঠক হয়।সালিশে শরিফুল চেয়ারম্যান তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা রায় দেয় এবং বিবাদী পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে এক লক্ষ টাকা দিলে চেয়ারম্যান পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে বাকী পঞ্চাশ টাকা আমাদের দিয়ে অলিখিত সালিশে বলেন এক মাসের মধ্যে বাকী টাকা পরিশোধ করা হবে।কিন্তু পাঁচ মাসের বাকী টাকা পাইনি।তিনি আরো বলেন,এর মধ্যে বিবাদী পক্ষ আরো এক লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিল কিন্তু চেয়ারম্যান নিষেধ করায় নেওয়া হয়নি।তিনি বলেন,দ্বারেদ্বারে ঘুরছি বিচারের জন্য,কিন্তু সংখ্যালুঘু হওয়ায় বিচার পাচ্ছিনা।
সেদিন সালিশে উপস্থিত থাকা যদুবয়বা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক সবুজ আলী বলেন, নিমাইয়ের বাড়ি আমার বাড়ির পাশে হওয়ায় সালিশে গিয়েছিলাম।সেদিন চেয়ারম্যান নিহতের পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অলিখিত তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা রায় দেয় এবং সাথে সাথে বিবাদীপক্ষ এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করলে জামানত হিসেবে চেয়ারম্যান পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে দিয়ে বলে আগামী এক মাসের মধ্যে বাকী টাকা পরিশোধ করা হবে।কিন্তু পাঁচ মাসেও টাকা পাইনি পরিবার।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যদুবয়বা ইউনিয়ন পরিশোধের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম এধরনের সালিশ আমি করতে পারিনা এমন মন্তব্য করে বলেন,জনপ্রতিনিধি হিসেবে উভয় পক্ষের অনুরোধে সালিশে গিয়ে উভয় পক্ষের সম্মতিতে অলিখিত তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সেদিনই এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করে বিবাদী বাকী টাকা একমাসের মধ্যে পরিশোধ করবে।কিন্তু পরবর্তীতে টাকাটা আর দেয়নি বিবাদী। তিনি আরো বলেন,আমি বেশ কয়েকবার উভয় পক্ষকে বাকী টাকার বিষয়ে বসাবস কথা বলেছি কিন্তু কেউ আসেনি।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত তরুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। কুমারখালী থানার ওসি বলেন,চেয়ারম্যানরা গ্রাম্য আদালতে বিভিন্ন সালিশ করতে পারে তবে এধরনের বিষয়ে সালিশী তারা করতে পারে না।