পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও

এস,এম আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা) ॥ পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়া পানিতে ৪টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৩৫ হাজার ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রায় দেড় লাখ গাছ-পালা উপড়ে গেছে। হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল ও চিংড়ি ঘের পানি ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ এবং পানিতে তলিয়ে গেছে। খুটি ভেঙ্গে ও তার ছিড়ে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। প্লাবিত এলাকার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে দূর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। সূত্রমতে, বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান প্রবল গতি নিয়ে আঘাত হানে উপকূলীয় পাইকগাছায়। ভোর রাত পর্যন্ত স্থায়ী হয় ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ৯-১০ ঘন্টার ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা এলাকা। দেলুটি, গড়ইখালী, সোলাদানা ও রাড়–লী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়া লবণ পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেলুটি ইউনিয়নের ৩টি পোল্ডার। ইউনিয়নের ২২নং পোল্ডারের কালিনগর এলাকার ৩টি স্থান থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে ওই পোল্ডারের ৫টি ওয়ার্ডের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ হয় তরমুজ সহ হাজার হাজার বিঘার জমির ফসল। ২০নং পোল্ডারের পারমধুখালী এলাকার গোটা বাঁধ উপচে পানিতে তলিয়ে যায় সম্পূর্ণ পোল্ডার। অনুরূপভাবে ২০-১নং পোল্ডারের গেওয়াবুনিয়া ও চকরিবকরি এলাকা সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের। প্লাবিত এলাকার মানুষ আশ্রয় নেয় বেড়িবাঁধে। গেওয়াবুনিয়া গ্রামের তাপস মন্ডল জানান, রাত ৯টার পর ঘূর্ণিঝড়ের গতি বেড়ে যায়।
এরপর রাত ১১টার দিকে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ উপচে পড়া পানিতে গোটা এলাকা তলিয়ে যায়। সুষ্মিতা মন্ডল জানান, এলাকার সকল বসতবাড়ী, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা ওই রাতেই বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেই। ইউপি সদস্য প্রীতিলতা ঢালী জানান, আমাদের ত্রাণের চেয়ে বাঁধের সংস্কার বেশি জরুরী। প্রচন্ড ঝড়ে উপড়ে যায় ছোট-বড় দেড় লাখ গাছ। আম, লিচু, জামরুল, কাঁঠাল সহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমী ফল ঝড়ে পড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অসংখ্য খুটি ভেঙ্গে ও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ছিড়ে যায় কয়েক কিলোমিটার তার। ফলে বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে গোটা এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
২০ হাজার বাড়ী সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার বাড়ী আংশিক বিধ্বস্ত হয়। অসংখ্য শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে এবং পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বৃহস্পতিবার সকালে দেলুটি ইউনিয়নের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না। তারা নিজ গাড়ী, নছিমন-ইজিবাইক, নৌযান ও পায়ে হেটে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পৌছান। দিনভর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন এবং দূর্গত মানুষের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস, সমাজসেবা কর্মকর্তা সরদার আলী আহসান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম, সহকারী প্রোগ্রামার মৃদুল কান্তি দাশ, উপ- সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম ও ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানান, ঘূর্ণিঝড় দীর্ঘ সময় স্থায়ী হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। তবে কোথাও প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটেনি। বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়া পানিতে ৪টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৩৫ হাজার ঘর বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে ওই এলাকার দূর্গত মানুষের মাঝে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং যতদিন পর্যন্ত তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না হবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সবধরণের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। ঘূর্ণিঝড়ে একটি মানুষেরও যাতে দূর্ভোগ না হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই লক্ষে কাজ করা
হচ্ছে।