পাইকগাছার কপিলমুনি পুরোপুরি লকডাউন: আক্রান্ত ৫

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনি বাজার পুরোপুরি লকডাউন। শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা থাকবে। হাট-বাজারে চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করতে হবে। কপিলমুনিতে অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের করোনা পজেটিভ হওয়ার পর উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৫ জন করোনা রোগী সানাক্ত হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে উপজেলায় ৩ জন আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে কপিলমুনিতে বাড়ি ৪জন এবং অপরজনের বাড়ি চাঁদখালী ইউনিয়নে। দিন দিন যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কপিলমুনি হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার এখনই পুরোপুরি লকডাউন করা উচিত। তা না হলে উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও জনগণের মধ্যে সচেতনা তেমন দেখা যাচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে সবাই করোনাকে জয় করে ফিরেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলায় লকডাউন ঘোষনা করা হলেও পাইকগাছা উপজেলায় এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। প্রশাসনের তরফ থেকে প্রতিদিন এলাকায় মাইকিং করা হলেও লোকজন বেমালুম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যে যার মত করে চলাফেরা করছে। এদিকে দিনদিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সরকার কয়েক দফায় সাধারন ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করে এবং সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করে। যা গত মে মাসে শেষ হয়েছে। এদিকে অর্থনীতিকে সচল করার লক্ষে সরকার জুন মাস থেকে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করে লকডাউন তুলে নেয়।
এরপর থেকে লোকজন ঘর হতে বের হওয়া শুরু করে। মানুষ ভাবছে লকডাউন নেই কে কি বলবে। যে যার মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকার মহামারী মোকাবেলায় সবকিছু খুলে দিলেও একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করে। এমনকি মাস্ক ব্যবহার না করা ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের জেল দেওয়া হবে বলে ঘোষনা দেয়। এরপরও লোকজন কোন বিধি নিষেধ না মেনে যে যার মত করে চলে ফেরা করছে। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া জেলা প্রশাসক গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলা ব্যাপী লকডাউন ঘোষনা করেন। কিন্তু এরপরও লোকজন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করছে। নেই মুখে মাস্ত, নেই সামাজিক দুরত্ব।
এদিকে উপজেলার কপিলমুনি ইউপির প্রতাপকাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আব্দুল মান্নান সরদার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট ৫ জন করোনা আক্রান্ত হলো। এর মধ্যে কপিলমুনিতেই বাড়ি ৪ জনের। এরা হলেন সাংবাদিক তপন পাল ও তার স্ত্রী তৃপ্তি পাল, কাশিমনগর গ্রামের রামপ্রসাদ শীল ও প্রতাপকাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদার। এ ছাড়া চাঁদখালী ইউনিয়নের শাহাপাড়া গ্রামের রমজান গাজী নামে এক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার জানান, তার কাছে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন তপন পাল ও তার স্ত্রী এবং কাশিমনগরের রামপ্রসাদ শীল।
পুলিশ সদস্য চাঁদখালীর রমজান গাজী এবং প্রতাপকাটির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদারের ব্যাপারে কোন তথ্য উপজেলায় নেই। তবে কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, গত কয়েকদিন আগে শিক্ষক আব্দুল মান্নান অসুস্থ হলে তিনি খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা নেন। ওখানেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তার রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়নার নির্দেশে শনিবার দুপুরে মান্নান স্যারের বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। সর্বশেষ এ আক্রান্তের পর কপিলমুনি ইউনিয়ন সহ গোটা উপজেলার মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কপিলমুনি বাজার সহ অত্র এলাকায় চলাফেরা করতেও অনেকেই ভয় পাচ্ছে।
অনেকেই মনে করছেন উপজেলা যারা এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রায় সবাই কপিলমুনি এলাকার। আবার এলাকার সবচেয়ে জনবহুল বাজার হচ্ছে কপিলমুনি। এ জন্য অনেকেই মনে করছেন কপিলমুনি বাজারসহ অত্র ইউনিয়নের মানুষের চলাচল সহ স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন যদি এখনই তৎপর না হয় কিংবা মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে শুধু কপিলমুনি নয় গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এই মহামারী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কপিলমুনি বাজারকে পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনও নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী এ কর্মকর্তা জানান। এলাকাবাসী প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।