বিধি লংঘন করে কলেজে সভাপতির মেয়ে-আত্নীয়কে নিয়োগের অভিযোগ

মোঃফজলে রাব্বি, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ নাটোরে বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের সভাপতির মেয়ে ও এক আত্নীয়কে কলেজের দুইটি শুন্যপদে বিধি লংঘন করে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ করেছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে, এ কাজে সহায়তা করেছেন মাউশির মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুজ্জামান।
নিয়মানুযায়ী লিখিত পরীক্ষার পর নিয়োগ বোর্ড না বসিয়ে ডিজি প্রতিনিধি একাকী প্রার্থীদের মৌখিক প্রশ্ন করা, লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের পূর্বেই ফলাফল শীটে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া এবং নিয়োগের ফলাফল সরাসরি কলেজ পরিচালনা পর্যদ সভাপতিকে হস্তাস্তরের অভিযোগ করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস। ত্রুটিপূর্ণ এই নিয়োগদানের ঘটনায় কলেজের শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা নতুন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা গ্রহণ সহ নিয়োগ প্রদানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত পত্র দিয়েছেন।
জানা যায়, কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ল্যাব সহকারী এবং পদার্থ বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে
বিজ্ঞপ্তির পর আবেদন করেন ১৩ জন পরীক্ষার্থী। আবেদনকারীদের মধ্যে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি
শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, মেয়ে নাসরিন এবং সভাপতির সমর্থক এক নিকট আত্মীয়ের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনও পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৮ মে নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন সিরাজ-উদ- দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, কলেজের অপর এক প্রফেসর, লোকমানপুর কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য রফিকুল ইসলাম।
দুটি পদের প্রার্থী বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া এলাকার আসাদুজ্জামান মুকুলের মেয়ে অনিকা সুলতানা, মাছিদুল আলমের মেয়ে নিভা খাতুন অভিযোগ করেন, লিখিত পরীক্ষা শেষে নিয়ম অনুযায়ী তাদের একে একে নিয়োগ বোর্ডে ডেকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। পরীক্ষা হলেই ডিজি প্রতিনিধি তাদের মৌখিক প্রশ্ন করেছেন। এছাড়া তারা অনেক ভাল পরীক্ষা দিলেও ওই দিন ফলাফল ঘোষণা না করে পরের দিন কলেজ সভাপতি শাহাবুদ্দিন ফলাফলশীট নিয়ে গিয়ে এলাকায় ঘোষণা করেন তার নিজ মেয়ে ও তার অনুসারী একজনের স্ত্রী পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
আরেক বঞ্চিত প্রার্থী স্বরাপপুরের আবদুল করিমের মেয়ে মৌসুমী আক্তার বলেন, ডিজি প্রতিনিধির যোগসাজসে সভাপতি প্রকৃত ফলাফল পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও নিকট আত্মীয়র স্ত্রীকে পরীক্ষায় প্রথম দেখিয়েছে। আমরা এই ফলাফল বাতিল ও পূনঃপরীক্ষার দাবী জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা কলেজ অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। নিরুপায় হয়ে আমরা সাংবাদিকদেরও সহায়তা চাচ্ছি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের একজন সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াই নীতিবিরুদ্ধ। সভাপতি তার মেয়ে ও নিকট আত্মীয়ের স্ত্রীকে নির্বাচিত করার জন্যই ডিজি প্রতিনিধির দ্বারা এমন কাজ করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলই এখানে মূল্যায়ন করা হয়নি।
এই ফল মূল্যায়ন করলেই দেখা যাবে কারা যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা নিয়োগের যোগ্য কি না।কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সেদিন লিখিত পরীক্ষা শেষে ওই হলেই ডিজি প্রতিনিধি একাকী মৌখিক প্রশ্ন করলে আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু তিনি (ডিজি প্রতিনিধি) তাতে কর্ণপাত করেননি উল্টো উত্তরপত্র মূল্যায়নের আগেই ফলাফল শীটে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তিনি নিজের শরীর খারাপের কথা বলে পরের দিন সকলকে এন এস সরকারী কলেজে যেতে বলেন। পরের দিন তিনটার দিকে সকলের সামনে ডিজি প্রতিনিধিকে ফোন করলে
তিনি জানান, কলেজের সভাপতি এসে বাগাতিপাড়া-লালপুরের এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের রেফারেন্সে ফলাফলশীটসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা পর্যদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন পাল্টা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ফারুক উদ্দীন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে কয়েক লাখ টাকার চুক্তি করেছেন। ব্যর্থ হয়ে এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ডিজি প্রতিনিধি অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগের বিষয়ে যে সব অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তা দুইটি পক্ষের রাজনৈতিক দ্বন্ধ ভিত্তিক। আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। পরে আর কি ঘটেছে না ঘটেছে সে নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের পরদিন ফলাফল দেওয়ার বিধান নেই, যেদিন পরীক্ষা সেদিনই ফলাফল দিতে হবে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল এ ব্যাপারে বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেবো। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করার ব্যাপারে সুপারিশ থাকবে।