প্রধান মেনু

পতিতাবৃত্তি করে ঋণ শোধের তাগিদ দেন ঝিনাইদহের সিও এনজিও !

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ সিও নামে একটি এনজিওর কিস্তির টাকা দিতে না পারাই আক্তারুল নামে এক যুবককে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন সিও এনজিওর লোকজন। সম্প্রতি সময়ে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে আক্তারুল ঝিনাইদহের সিও এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির টাকা সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছিলো না। সময় মতো কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এনজিও’র মাঠ কর্মীরা একজন টাইফোয়েড জ্বরে আক্রান্ত ঋণ গ্রহীতা আক্তারুল শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর জখম করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সিও এনজিওর লোকজন তাঁর বাড়িতে এসে গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে নানা কটুকথা ও অপদস্ত করে খারাপ মন্তব্য করে।

ঋণ গ্রহীতার স্ত্রী জেসমিন খাতুনের উদ্দেশে পতিতাবৃত্তি করে স্বামীর নেওয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে বলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৮ মার্চ পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামে। এই গ্রামের শামছুল ইসলামের ছেলে আক্তারুল ইসলাম (৩০) কে মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য সিও এনজিওর মাঠ কর্মীরা অকথ্য ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের ফলে তাকে ৩দিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় আক্তারুল লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার এনজিও সিওর গান্না বাজার শাখার মাঠ কর্মী সাইফুল ইসলাম, কণক রহমান, হিসাব রক্ষক আসলাম, ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম, ম্যানেজার আব্দুল লতিফ ও অফিসার হাসানকে আসামী করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আক্তারুল ওই এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। প্রতি সপ্তাহে তাকে ৫৫০ টাকার কিস্তি দিতে হয়। এক মাস টাইফোয়েড জ্বরে আক্রান্ত থাকার কারণে আক্তারুল কিস্তি দিতে পারেনি। এতেই বিগড়ে যায় এনজিও কর্মীরা। আক্তারুলের বড় ভাবী গান্না ইউনিয়নের মেম্বর নার্গিস বেগম অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন এনজিও কর্মীরা বাড়ির উপর গিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ এবং আক্তারুলের স্ত্রী জেসমিন খাতুনের উদ্দেশে পতিতাবৃত্তি করে স্বামীর নেওয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে বলে। এ কথার প্রতিবাদ করলে এনজিও কর্মীরা তার দেবর আক্তারুলকে ব্যাপক মারধর করে। তিন দিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর আক্তারুল ১১ মার্চ বাড়ি আসে।

মহিলা মেম্বর আরো জানান, এনজিও কর্তৃপক্ষ তার দেবরকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ দিতে সম্মত হয়েছে। ৫ দিন পর টাকা প্রদান করবে। এনজিও কর্মীদের নির্যাতনের শিকার আক্তারুল জানান, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি মিমাংশার জন্য গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মালিথা দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি যে বিচার করবেন তাই আমি মাথা পেতে নেব। স্থানীয় বেতাই পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, চেয়ারম্যান সমঝোতা করার উদ্যোগ গ্রহন করায় আমরা কিছুদিন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছি। নির্যাতিত উপযুক্ত বিচার না পেলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য ঝিনাইদহ প্রশাসনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে সিও এনজিও কর্তৃপক্ষ সারা জেলায় ঋণ দিয়ে চড়া হারে সুদ আদায় করছে। কিস্তির টাকা দিতে না পারলে গ্রামের হতদরিদ্র মহিলাদের নামে মামলা করে তাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে ভরছে বলে অহরহ অভিযোগ রয়েছে। সিও সংস্থার শাখা অনুযায়ী সমিতির সদস্য সংখ্যায় গরমিল রয়েছে। এনজিও’র নামে ঋণ নিয়ে ব্যক্তি নামে জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে সিও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অসংখ্য মামলা দিয়ে ফাসানো হয়েছে সিও সংস্থার কর্মীদেরকে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের অভিমত হচ্ছে, কোন এনজিও এমন আচরণ করতে পারে না। করলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে।