সভাপতি হতে বাবার প্রতারণা

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ ধরে রাখতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের মেয়েকে একই সাথে দুই স্কুলে ভর্তি করেছে এক বাবা। সে সাথে মেয়েটি পূর্ব থেকে যে স্কুলে লেখাপড়া করছে তাকে সেখান থেকে টিসি না নিয়েই অন্যত্র ভর্তি দেখানো হয়েছে প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মোঃ তৈয়বুর রহমান নামে এক অভিভাবক। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তোলপাড়া সৃষ্টি হয়েছে এবং এলাকাবাসীর মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর মুচির হাট সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী জেবা তাহসিন মিম। যার রোল নং-৮। পিতা মোঃ জিয়াউর রহমান। মা মুক্তি বানু ওই স্কুলেরই সহকারী শিক্ষিকা। সে প্রথম শ্রেনী থেকেই এখানে অধ্যায়নরত। সম্প্রতি সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদের প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং ন্যুনতম স্নাতক পাশ হতে হবে।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ফলে পাশ্ববর্তী পূর্ব বেলপুকুর সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ জিয়াউর রহমান আবারও ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ার জন্য তার মেয়ে জেবা তাহসিন মিম কে অধ্যায়নরত স্কুল থেকে কোন প্রকার টিসি না নিয়েই এই স্কুলে ভর্তি করান। যার রোল নং-৩৪। নামকাওয়াস্তে গত ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং তারিখে ভর্তি করানোর কারণে মিম দীর্ঘ একমাসে একদিনও এই স্কুলে ক্লাস করেনি। হাজিরা খাতায় তার কোন উপস্থিতির নজির নেই। মিম যথারীতি তার আগের প্রতিষ্ঠানেই নিয়মিত মায়ের সাথে গিয়ে ক্লাস করছে।
এমতাবস্থায় পূর্ব বেলপুকুর সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি জানতে পেরে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার প্রতিলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতি পদে আবারও থাকার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেয়া মোঃ জিয়াউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি আমার মেয়েকে আগের স্কুলেই রেখে দিব। মূলতঃ সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্যই এমনটি করেছিলাম। এখন এই স্কুলে তার ভর্তিটি বাতিল করবো।
পূর্ব বেলপুকুর সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমার জানা ছিলনা যে মিম অন্য স্কুলে পড়াশোনা করছে। তাই তাকে বিলম্বে হলেও ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। টিসি ছাড়া কিভাবে দ্বিতীয় শ্রেনীতে ভর্তি নেওয়া হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পশ্চিম বেলপুুকুর মুচিরহাট সাতপাই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম শফিউল আলম রানা জানান, মেয়েটি আমার স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকেই পড়াশোনা করছে। তাছাড়া তার মাও এই প্রতিষ্ঠানেরই সহকারী শিক্ষিকা। তাকে কী কারণে অন্যত্র ভর্তি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। তাছাড়া মাত্র ৩ দিন আগে মেয়েটির বাবা মোঃ জিয়াউর রহমান ছাড়পত্র নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, আজকে জেবা তাহসিন মিম এর বাবা মোঃ জিয়াউর রহমানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে ছাত্রী ও ছাড়পত্র সহ বিদ্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পূর্বে যেখানে ছাত্রীটি ছিল সেখানেই তাকে রাখতে হবে এবং পরের স্কুল থেকে নাম কেটে দেওয়া হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহজাহান মন্ডল জানান, আমিতো বাটম না যে টিপার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিবো। আবেদন পেয়েছি, তদন্ত করে বিষয়টি দেখছি।