ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য তার ব্যক্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক —তথ্যমন্ত্রী

ঢাকা, ২৬ মাঘ (৯ ফেব্রুয়ারি) : ড. কামাল হোসেনের ‘সরকারকে টেনে নামাতে হবে’ বক্তব্যকে তার ব্যক্তিত্বের
সাথে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ। আজ রাজধানীর কাকরাইলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) সেমিনার হলে সমবায় বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘শেখ হাসিনার দশ উদ্যোগ এবং উন্নয়ন সাংবাদিকতা’ বিষয়ে বাসস জেলা প্রতিনিধিদের দু’দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের সমসাময়িক রাজনীতি বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল হোসেন) গতকাল যে ভাষায় কথা বলেছেন, এটি তার ব্যক্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে তারাই পড়ে গেছেন। তাঁর নিজের দলের মধ্যে যে অনৈক্য, আমি ড. কামাল হোসেনকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাবো, তার দলের ঐক্যরক্ষা করার জন্য আরো মনোযোগী হওয়ার জন্য।’ এ সময় সরকারের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের বিষয়ে ড. হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ভাষায় কথা বলেন, এতে আইন এবং আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে, কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার কোনো এখতিয়ার সরকারের নেই। সরকারের যদি বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হয়, তাহলে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেটি তো সংবিধান অনুমোদন করে না। সুতরাং ফখরুল সাহেব আইন এবং আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ আরো বলেন, ‘ক্রমাগতভাবে বিএনপি’র আইন আদালতের তোয়াক্কা না করার বিষয়টি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে আমি মনে করি । তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব-সহ বিএনপিকে বলবো এ ধরনের সমাবেশ করে হুমকি-ধামকি দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি কখনো মিলবে না, তাদেরকে আইনি পথেই হাঁটতে হবে।’ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আহুত বিক্ষোভের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা বিক্ষোভ করতেই পারেন, কিন্তু সেই বিক্ষোভটি কার বিরুদ্ধে, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। সেটি কি আদালতের বিরুদ্ধে! কারণ আদালতই বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি দিয়েছে। বিক্ষোভ তো তাহলে আদালতের বিরুদ্ধে।’
মানবিক রাষ্ট্র ও উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা নিন —বাসস প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রীঃ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবদানের আগে তথ্যমন্ত্রী কর্মশালার উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মানবিক রাষ্ট্র ও উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য বাসস জেলা প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান। বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব রেজাউল আহসান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসেন প্রকল্প সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করেন।
মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমাদের লক্ষ্য শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণই নয়, মানবিক রাষ্ট্র ও উন্নত জাতিও গঠন করা। সেই কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘আমার বাড়ি আমার খামার’, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’সহ যুগান্তকারী দশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা রাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রূপান্তর করবে ।’ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নলালিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান ২০০৮ সালে যখন আমরা দেই, তখনও ভারতবর্ষ সেটি নিয়ে ভাবেনি, তারা এই স্লোগান দেয় ২০১৪ সালে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এ স্লোগান দেয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে সংযুক্ত করা।
বাসস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বাসস একটি সরকারি সংবাদ সংস্থা। বাসসকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে কারণ একটি রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে মানুষকে আশাবাদী করে তুলতে হয়। হতাশাবাদী সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে, হতাশাগ্রস্থ জনগোষ্ঠী দিয়ে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। যখন মানুষ আশাবাদী হয় তখনই সেই রাষ্ট্র ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভবপর হয়।’
ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে মানুষের মধ্যে শুধু নৈরাজ্য ছড়ায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আজকে বাংলাদেশে আমাদের তরুণরা যেভাবে কাজ করছে, নিজেরা উদ্যোক্তা হচ্ছে, আর ১০ বছর পরে বাংলাদেশ এবং উন্নত দেশের মধ্যে পার্থক্য আর থাকবে না। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৭৪ শতাংশ। শিল্পের অবদান ছিল ১০ শতাংশের কম। আর এখন বাংলাদেশে শিল্পখাতের অবদান হচ্ছে ৩৫ শতাংশের বেশি কারো কারো মতে সেটি ৩৭ শতাংশ। আর কৃষির অবদান হচ্ছে ১৪ শতাংশ।
আর সার্ভিস সেক্টরের অবদান হচ্ছে ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ আমরা ধীরে ধীরে শিল্পোন্নত দেশ হতে চলেছি।’ ‘এই যে অগ্রগতির কথাগুলো মানুষকে জানাতে হবে, মানুষ যেন আশাবাদী ও উদ্যোগী হয়, একইসাথে যেন মানবিক হয়, শুধু নিজের জন্য না ভাবে, সমাজ ও দেশের জন্যও ভাবে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সম্মিলিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের যে কর্তব্য সেটা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়েই যদি আমরা সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করি, তাহলেই দেশ এগুবে।’ ‘একইসাথে সমাজের অসংগতিও তুলে ধরতে হবে, বাসস সরকারি সংবাদ সংস্থা তাই বলে এগুলো তুলে ধরতে হবে না, তা নয়’ স্মরণ করিয়ে দেন মন্ত্রী।