ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ চিকিৎসকের জামিন নামঞ্জুর

মোঃমাহফুজুর রহমান বিপ্লব, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারীসহ সরঞ্জামাদী ক্রয়ে দুর্নীতি ও ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ৩ চিকিৎসকের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত অতিরিক্ত-১ এর বিচারক বেগম কামরুন্নাহার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) ডা. গণপতি বিশ্বাস শুভ, হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মিনাক্ষী চাকমা ও হাসপাতালের সাবেক প্যাথোলজিস্ট ডা. এ এইচ এম নুরুল ইসলাম কে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদি হয়ে ফরিদপুরের জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতে (মামলা নং-৪) দুদক ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কমলেশ মন্ডল মামলাটি রেকর্ড করান। মামলা দায়েরের পর উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া ৬ সপ্তাহের জামিন এর মেয়াদ শেষে রোববার (১২ জানুয়ারি ২০২০) ৬ আসামীর মধ্যে ওই তিন জন ফরিদপুরের আদালতে হাজির হলে আদালতের বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে জেলু হাজতে প্রেরণ করেন। মামলায় মালামাল সরবরাবহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সি ফররুখ আহমেদ, জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) ডা. গণপতি বিশ্বাস শুভ, ফমেক হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মিনাক্ষী চাকমা ও ফমেক হাসপাতালের সাবেক প্যাথোলজিস্ট ডা. এএইচএম নুরুল ইসলামকে আসামী করা হয়।
মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবি ইমরান হোসেন লিমন জানান, আমার মক্কেলদের নাম এজাহারে উল্লেখ থাকলেও তারা মূল অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাদের তিনজনের উপর দায়িত্ব ছিল শুধু মাত্র বাজার দর সংগ্রহ করা, তারা শুধু মাত্র বাজার দর সংগ্রহ করে শংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, তার মক্কেলগন মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা আজ নিম্ম আদালতে হাজির হলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন না মঞ্জুর করেন। অপরদিকে রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবি দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, এর তিন জন এজাহার নামীয় ৪, ৫ ও ৬ নং আসামী।
তাদের তিনজনের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। প্রসঙ্গত, আসামীদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধভাবে প্রাক্কলনব্যতিত উচ্চ মূল্যে হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করার অভিযোগে ৪০৯/৫১১/১০৯ ধারায় দন্ডবিধির তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এ মামলা করা হয়।
গত ২০ আগস্ট ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) যন্ত্রপাতি ও বিশেষ পর্দা কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এ জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এরপর হাসপাতালটির আইসিইউর পর্দা ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেসার্স অনিধক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম। অন্য সদস্যরা হলেন উপসহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান ও শহিদুর রহমান। অনুসন্ধান শেষে গত ২৭ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার ফরিদপুরের আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
« ফরিদপুরে কৃতি ছাত্রীদের মাঝে বাই সাইকেল বিতরণ (পূর্বের খবর)