গভীর রাতে মানুষের মাঝে কম্বল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন ঝিনাইদহ-এর ডিসি

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ঃ ঝিনাইদহের সদও উপজেলায় বুধবার গভীর রাতে বেরিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। জানা যায় জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থানরত ছিন্নমূল অসহায় নারী পুরুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন। সারাদেশের মতো এ জেলাতেও বুধবার রাত থেকে তীব্র শীতের দাপট চলছে। এ অবস্থায় গরিব খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে। শীতের তীব্রতায় রীতিমতো কাঁপছেন তারা। হাড় কাঁপানো এ শীতে কম্বল পেয়ে আনন্দিত হন শীতার্তরা।
প্রচন্ড শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন এ জনপদের মানুষ। টানা ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। হতদরিদ্ররা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গরম কাপড়ের অভাবে তাদের এক মাত্র ভরসা আগুন। সামান্য গরম কাপড় কিংবা কম্বল পেলে খুশী তারা। জেলায় শীতের তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জিপে শীতবস্ত্র বোঝায় করে গ্রাম হাটবাজারে ছুটছেন। গভীর রাতে কম্বল হাতে তাকে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। গভীর রাতে সদর শীতবস্ত্র বোঝায় করা কয়েকটি জীপ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভেন্নাতলা গ্রামের ছোট একটি বাজারে দাড়ায়।
তখনো দুইটি দোকান খোলা। জিপ থেকে হাসি মুখে নেমে আসে এক ব্যক্তি। তাকে দেখে অবাক তারা। কয়েক জনের গায়ে গরম কাপড় নেই। আগুনের আঁচে দাড়িয়ে ছিলেন তারা। জেলা প্রশাসক নিজে হাতে তাদের গায়ে কম্বল জাড়িয়ে দিলেন। বাজার টির পাশের গ্রামের নাম ভেন্নাতলা। এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ নিম্নআয়ে সংসার নির্বাহ করেন। তখন গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘরের সামনে শীতবস্ত্র হাতে জেলা প্রশাসককে দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তারা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে হতদরিদ্র মানুষগুলোর হাতে কম্বল তুলে দেন তিনি। কথা হয় দুলাল বিশ্বাসের বৃদ্ধা স্ত্রী আদুরির সঙ্গে। ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। জেলা প্রশাসক তার গায়ে একটি কম্বল জড়িয়ে দিলেন। খুশীতে কেঁদে দিলেন ওই বৃদ্ধা। জেলা প্রশাসক মানে কি, জানা নেই তার। সে জানায়, শীতে ঘুম আসছিল না।
কে যেন আমার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিল। এখন ভাল লাগছে তার। ৫/৬ বছর আগে সরকারের দেয়া একটা কম্বলই তার সম্বল ছিল। ছোট্ট কুটির বয়স মাত্র ৬। ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার। সে ছুটে আসে জেলা প্রশাসকের জিপের কাছে। বৃদ্ধ দাদার জন্য হাত বাড়িয়ে একটি লাল রংয়ের কম্বল চেয়ে নেয় সে। গোটা গ্রাম ঘুরে ঘুরে গভীর রাত পর্যন্ত শীত বস্ত্র বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক(ডিসি)। দোকান পাট হাট বাজারে যেখানেই শীতার্ত মানুষ দেখছেন সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন তিনি। এ সময় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বদরুদ্দোজা শুভ তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন রাত গভীর হলেই ড্রাইভারকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। গত কয়েক দিনে সরকারের ত্রাণ ভান্ডার থেকে শত শত শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।