হলি আর্টিজান রায়কে স্বাগত না জানানো বিএনপি’র জঙ্গি প্রশ্রয়েরই পরিচায়ক — তথ্যমন্ত্রী

ঢাকা, ১৩ অগ্রহায়ণ (২৮ নভেম্বর) : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, হলি আর্টিজান হত্যাকান্ডর বিচারের রায়কে বিএনপি’র স্বাগত না জানানো এটাই প্রমাণ করে যে তারা জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেনি।’ আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-সহ বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই যখনই কোনো জঙ্গিরা এনকাউন্টারে মৃত্যুবরণ করেছে, তখনই প্রশ্ন তুলছে- এই মৃত্যুবরণ কেন? অর্থাৎ জঙ্গিদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা প্রশ্রয় দিয়েছে, সহায়তা করেছে। এমনকি তাদের ২০ দলীয় জোট, যেটি এখন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কয়-দলীয় জোট আছে সেটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানেন, সেই জোটের মধ্যও বহু নেতা আছেন, যারা মনে করেন তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি তালেবানি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা।’
ড. হাছান বলেন, ‘সেই ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় আমরা গতকাল আবার দেখলাম যে, হলি আর্টিজান হত্যাকা-ের একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে এবং সেই ঐতিহাসিক রায় শুধু বাংলাদেশে জঙ্গিদমন এবং নির্মূলে যে সহায়ক হবে তা নয়, আমি মনে করি বিশ্বপ্রেক্ষাপটেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রায়। সমগ্র দেশের মানুষ এই রায়কে স্বাগত জানালেও বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এতেই প্রমাণিত হয়, তারা শুধু সন্ত্রাসী রাজনীতিই করে না, তারা যে জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, সেই রাজনীতি থেকেও বেরিয়ে আসেনি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ আমাদের দেশে আমরা যেভাবে জঙ্গি দমন করতে পেরেছি, পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্রও এভাবে জঙ্গি দমন করতে পারেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ, নর্থ আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য জায়গাতেও জঙ্গি তৎপরতা দমন করার ক্ষেত্রে তারা যেমন সফলকাম হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সফলতা আমাদের দেশে আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি।’
এ সময় সাংবাদিকরা আদালতে অভিযুক্তদের মাথার টুপি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা সমীচীন হবে না। কারণ বন্দিদেরকে টুপি দেয়া হয়। সেই টুপিতে নিজেরা কিছু এঁকেছে কিনা সে বিষয়টাও থাকে। এটা যেহেতু তদন্তাধীন, সেহেতু এ বিষয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু বলা এ মুহুর্তে সম্ভব নয়।
গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বিএনপি’র গাড়ি ভাঙচুর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘গত পরশুদিন হাইকোর্টের সামনে বিএনপি গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং গাড়ি ভাঙচুরের মামলাও হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম বিএনপি ভাঙচুর, সন্ত্রাস, পেট্রোল বোমার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে কিংবা আসবে। গত পরশু দিনের ঘটনা প্রমাণ করে, তারা তাদের যে মূলনীতি- সন্ত্রাসী রাজনীতি, ভাঙচুরের রাজনীতি, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, পেট্রোল বোমার রাজনীতি থেকে তারা বেরিয়ে আসেনি । এই ঘটনা এটাই প্রমাণিত হয়, সুযোগ পেলেই
তারা ছোবল দেবে।
‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয় তো আদালতের ব্যাপার। সুতরাং আদালত যদি জামিন বা খালাস দেন, তিনি মুক্তি পেতে পারেন। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করলে মুক্তি মিলবে না। মানুষের ওপর আক্রমণ করলে তো মুক্তি সম্ভব নয়। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করে, জনগণকে প্রতিপক্ষ মনে করে, জনগণের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে তো জনগণের রাজনীতির দল হওয়া যায় না, এটা রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের ভাষা হতে পারে না।’
‘কেউ কেউ বলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’-এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘আমি মনেকরি বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে- এটি বলা সমীচীন নয়। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে এবং একইসাথে বিএনপি যে রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করছে, জনগণকে জিম্মি করা, জনগণকে আক্রমণ করা গাড়ি ভাঙচুর করা, বোমা নিক্ষেপ করা, এগুলোর কারণে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, তা আমি মনে করি না।’