প্রধান মেনু

২১দিনে ভারত থেকে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ২৩৫ আটক

শামীমুল ইসলাম শামীম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে শত শত নারী-পুরুষ। সম্প্রতি ভারত সরকার সে দেশের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ করে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে বিজিবি ও জেলা প্রশাসন। তবে এসব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি।

চলতি মাসের ১ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২৩৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অপরদিকে, আটকরা জানিয়েছেন সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ আরও অসংখ্য নারী-পুরুষ আছে।তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। বিজিবি তাদের নজরদারী বাড়ালেও কোন ভাবেই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। বরং বাংলাদেশী বলে তাদের এদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজ শনিবার বাংলাদেশে ঢুকেছে ২১ জন নারী, শিশু ও পুরুষ। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ২০শে নভেম্বর পর্যন্ত মহেশপুর থানায় ১৬টি মামলা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিজিবি প্রতিদিন যতজনকে আটক করেছে, অনুপ্রবেশ করছে তার চেয়ে অনেক বেশি। স্থানীয়দের দাবি, অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে রাতের অন্ধকারে শত শত নারী-পুরুষ প্রবেশ করছেন বাংলাদেশে। এতে সহায়তা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

জানা যায়, মহেশপুর উপজেলার জুলুলী, খোসালপুর, বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর ও শ্যামকুড় সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে অসংখ্য মানুষ। চলতি মাসে ৫৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের হাতে আটক শনিবার পযর্ন্ত ২৩৫ জনের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। আসাম ও ব্যঙ্গালুরুসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা এ মানুষগুলোকে ভারতের এনআরসিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। যে কারণে ভারত সরকারের একটি সরকারি বাহিনীর চাপে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী হিউম্যান রাইটস মনিটরিং অর্গানাইজেশনের সভাপতি এম.এম.শামীম বলেন, সীমান্ত দিয়ে যারা আসছে, তারা অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়েছেন। এখন এ সমস্যা সমাধানে দু’দেশের সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত যারা আটক হয়েছেন তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে তারা কেউ ১০ বছর, কেউ ১৫ বছর আগে ভারতে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় মহেশপুর থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগের বাড়ি বাগেরহাট ও মোড়েলগঞ্জ এলাকায়।

বিজিবির ৫৮ খালিশপুর ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যারা বাংলাদেশে আসছে তাদের ব্যাপারে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা এ সীমান্ত দিয়ে আসছেন তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে তাদের আটক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেলে কোথায় উঠবে, এটা নিয়েও একটা চিন্তা রয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিজিবির পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জেলার সীমান্ত এলাকা ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই।

লে.কর্নেল কামরুল আহসান আরো বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা শত শত নারী-পুরুষের অবৈধ অনুপ্রবেশ যাতে আর না হয়, সে ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মহেশপুর-ভারত সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহায়তায় দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হবে। বিজিবির ভাষ্য, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। আটকরা বিজিবিকে জানিয়েছে, ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) আতঙ্ক ও নানা চাপের কারণে তারা ভারত ছেড়েছেন। মহেশপুর উপজেলায় ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার।

এর মধ্যে কাঁটাতার বিহীন এলাকা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়েই বেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে বিজিবি ও পুলিশ জানিয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা প্রচুর পরিমাণে নারী-পুরুষ ও শিশু ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য, তারা পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিল। ওখানে কোনো বাসা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো।

সমপ্রতি ওখানকার স্থানীয় নাগরিকরা তাদের খোঁজ করছে এবং যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা তাদের বলে দিয়েছে, তাদের আর রাখতে পারবে না। বাধ্য হয়ে তারা ভারতের স্থানীয় দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি তাদের আটক করে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে শত শত নারী-পুরুষ মহেশপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে।