প্রধান মেনু

ভাঙ্গায় ইউএনও মুকতাদিরুল আহমেদ এর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ

মনিরুল হক মোল্লা: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমেদ এর বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, ঘুষ দূর্ণীতি, সরকারি গাড়ীর অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা যায়, তিনি বিভিন্ন সরকারি কাজ টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূতভাবে তার অফিস সহকারি জাকির হোসেন ও পিওন জাহাঙ্গীর হোসেনকে দিয়ে করিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলা পরিষদের মেরামত কাজ, জমি আছে ঘর নেই প্রকল্প, আলগী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুতায়ন, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়াটারের সামনে গাছ কর্তন, অফিসার্স ক্লাব, গ্যারেজ ও গাড়ীর র‌্যাম রুম তৈরী প্রকল্প। তার বিরুদ্ধে ড্রেজার বানিজ্যেরও অভিযোগ আনা হয়েছে।

যারা তাকে নিয়মিত টাকা দিচ্ছেন তারাই ড্রেজার দিয়ে ঝামেলা ছাড়াই বালু উত্তোলন করতে পারছেন। আর যারা টাকা দিতে পারছেন না তাদেরকে এসিল্যান্ডকে দিয়ে মেশিন পুড়িয়ে ফেলাসহ জেল জরিমানা করছেন। এছাড়া ইউএনও মুকতাদিরুল আহমেদ এর বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ীর অপব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। তিনি মাঝেমধ্যেই সরকারি গাড়ী নিয়ে ঢাকার কল্যানপুরে তার শ্বশুর বাড়ি এবং ময়মনসিংহের তারাকান্দি গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। যাতায়াত পথে ফেরিঘাটে তিনি নিজেকে ভিআইপি পরিচয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরিতে ওঠেন এবং ফেরির ষ্টাফদের সাথে খারাপ আচরন করেন। তিনি গত ১ মে’২০১৯ ইং তারিখে ফরিদপুর ঘ-১১-০০২৪ গাড়ী নিয়ে ময়মনসিংহ তারাকান্দায় এবং ২ মার্চ’২০১৯ ইং তারিখে ঢাকার কল্যানপুরের ১১ নং সড়কের সার্জেন্ট গলিতে সরকারি গাড়ী অরক্ষিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করেন।

ইতিপূর্বে দেশে ঘুর্ণিঝড় ফনির প্রভাব দেখা দিলে সরকার ঘোষিত ছুটি বাতিল করা হলেও তিনি সরকারি নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তিনি ঐদিন কর্মস্থলে না থেকে ৩ মে’২০১৯ ইং তারিখ সন্ধ্যায় শ্বশুর বাড়ি থেকে রওয়ানা করে ভাঙ্গায় কর্মস্থলে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিধি বাম। পাটুরিয়া ঘাটে এসে ফেরি চলাচল বন্ধ দেখে তিনি বিভিন্ন স্থানে ফোন দিয়ে ফেরি চলাচলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মহিলা অফিস সহকারি সানজিয়া আক্তার, মধুখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, অফিস পিওন জাহাঙ্গীর ও গাড়ীর ড্রাইভার বাচ্চুসহ শিবালয় মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে রাত্রি যাপন করেন। পরেরদিন ৪মে’২০১৯ ইং তারিখে টাঙ্গাইলের যমুনা ব্রীজ হয়ে ৫মে’২০১৯ ইং তারিখে নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসেন।

এমনকি ১০ নভেম্বর’২০১৯ ইং তারিখে ঘুর্নীঝড় বুলবুল ধেয়ে এলেও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে এদিনও তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। আর সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রী খীসা যান ভারতে। গত ১৭ আগষ্ট’২০১৯ তারিখে ইউএনও মুকতাদিরুল আহমেদ সরকারি নতুন কালো জিপ গাড়ীটি (ঢাকা-অ-১৪৮) নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর হালুয়া ঘাট বর্ডার ও তারাকান্দা নিজ বাড়িতে বেড়াতে যান। এ বিষয়ে তার সফর সঙ্গী অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন তার ফেসবুকে ভ্রমনের বিভিন্ন ছবি আপলোড করে নিত্যনতুন ষ্টাটাস দিয়েছেন। জানা যায়, ইউএনও সরকারি গাড়ী অবৈধভাবে ব্যবহার করে তার ড্রাইভারকে দিয়ে মিথ্যা ভ্রমন কাহিনী রেজিষ্টার বহিতে লিপিবদ্ধ করিয়ে থাকেন।

এছাড়া তিনি গত ২৮ অক্টোবর’২০১৯ ঢাকা মেট্রো গ-১১-১৫৫২ নাম্বারের একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে উপজেলার কালামৃধা ও নাছিরাবাদ ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫/৬ মন ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ জব্দ করেন। জব্দকৃত ইলিশ মাছের কিছু গোপনে অফিস সহকারি জাকির হোসেন ও অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীরকে দিয়ে বিক্রি করেন এবং বাকী মাছ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষ থেকে বাঁচতে ইউএনও’র বাসার নিচতলার ডিপফ্রিজে রাখা ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ জাহাঙ্গীর হোসেনকে দিয়ে ফ্রিজসহ রাত্রি ১১:৩০ টায় এসিল্যান্ড এর গাড়িতে করে নগরকান্দায় পাঠিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে জনসাধারনের সাথে খারাপ আচরন করার অভিযোগও শোনা যায়। তিনি প্রায়ই স্বগৌরবে বলে থাকেন, “আমাকে কেউ কিছু করতে পারবেনা।

কারন আমার স্থানীয় এমপি’র আর্শীবাদ আছে”। এ বিষয়ে একাধিকবার ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অফিস সূত্রে জানা যায়, তিনি এখন ঢাকা আছেন। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি তিনি উপজেলার আলগী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুতায়ন না করে শুরুতেই মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের বারোটা বাজিয়ে বিশেষ আলোচনায় আসেন। শোনা যায়, তিনি স্থানীয় এমপি মহোদয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নানান অপকর্ম। যা দেখার কেউ নেই। ভাঙ্গা উপজেলাবাসি ইউএনও মুকতাদিরুল আহমেদ এর সকল দূর্ণীতির নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।