জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ; পাল্টে গেছে সেবার ধরণ পাইকগাছায় কোন হয়রানী ছাড়াই দ্রুত ভূমি সেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা) ॥ পাইকগাছা উপজেলা ভূমি প্রশাসন জনবান্ধব হওয়ায় দালাল ও মধ্যসত্তভোগী মুক্ত হয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। ফলে একদিকে যেমন কোন হয়রানী ও অর্থনৈতিক লেনদেন ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরদিকে বেড়েছে রাজস্ব আয়। ভূমি অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরী হয়েছে আস্থা। দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সচেতনতা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সার্বিক নির্দেশনায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়নার তত্বাবধানে ও নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলমের ব্যবস্থাপনায় গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পাল্টে গেছে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সেবা কার্যক্রম।
এ সব অফিস এখন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উল্লেখ্য, এক সময় উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে বলা হয়ে থাকতো। হয়রানী ছাড়াই কোন সাধারণ মানুষ সেবা পেতোনা বলে সকলের ধারণা ছিল। বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টে যাচ্ছে পাইকগাছা উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সেবা কার্যক্রম। ভূমি প্রশাসনকে গতিশীল ও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত, সাধারণ মানুষ যাতে দালাল ও মধ্যসত্তভোগীদের খপ্পরে না পড়ে এবং কোন হয়রানী ছাড়াই সেবাপায়, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষ নিজেরাই অতি সহজে যাতে সেবা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান জনবান্ধব ভূমি প্রশাসন।
ভূমি প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম তিনি গত ২ অক্টোবর উপজেলা ভূমি অফিসে যোগদান করেন। যোগদান করেই তিনি প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভিজিট করেছেন। মতবিনিময় করেছেন সাধারণ মানুষের সাথে। প্রত্যেক সাধারণ মানুষের মধ্যে ভূমি সেবা সম্পর্কে যাতে ধারণা থাকে এ জন্য তিনি “ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন লিফলেট তৈরী করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করেছেন। ফলে এ ধরণের লিফলেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ই-নামজারি থেকে শুরু করে দাখিলা ও ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। সে অনুযায়ী ভূমি অফিস গুলোতে গিয়ে দালালদের খপ্পরে না পড়ে সাধারণ মানুষ এখন নিজেরাই নিজেদের সেবা গ্রহণ করছে। ফলে কোন মানুষকে এখন আর হয়রানী হতে হচ্ছে না।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পাদন করা হচ্ছে ই- নামজারি কার্যক্রম। খাস জমির সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকায় অনেক সময় দরিদ্র মানুষরা খাস জমি থেকে বঞ্চিত হয়। আবার অনেক সময় সরকারি খাস জমি চলে যায় ভূমি দস্যুদের দখলে। এ জন্য তৈরী করা হচ্ছে খাস জমির ডাটাবেজ। এ ধরণের বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় অতিতের যেকোন সময়ের চেয়ে দ্রুত এবং হয়রানী ছাড়াই উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ভূমি সেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ আলী গাজী জানান, এখন আর ভূমি অফিসে এসে হয়রানী হতে হয় না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেবা পাওয়া যায়। এরআগে এতো দ্রুত সেবা পাওয়া যেতনা বলে জানান শিক্ষক আব্দুস সামাদ। ভূমি অফিসে এখন আর দালাল-বাটপারদের দেখা যায়না বলে জানান শিক্ষক আব্দুস সোবহান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, “জনবান্ধব ভূমি প্রশাসন, জনগণের পাশে সর্বক্ষণ” “ভূমি সেবায় বিশেষ দিন, আপন ভূমির দাখিলা নিন” সহ বিভিন্ন শ্লোগানকে সামনে রেখে ভূমি অফিসের কার্যক্রম গতিশীল করতে নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে ভূমি সেবা, সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেওয়া, ভূমি অফিস দালাল মুক্ত করা, বিভিন্ন ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত লিফলেট তৈরী ও বিতরণ এবং খাস জমির ডাটাবেজ তৈরী। এ সব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে কোন হয়রানী ছাড়াই সাধারণ মানুষ নিজেরাই ভূমি অফিস থেকে ভূমির সেবা নিচ্ছেন এবং প্রতিটি সেবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবাই পাচ্ছেন। অতিতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভূমি অফিসের কার্যক্রম ও ভূমি প্রশাসন এখন অনেক বেশি জনবান্ধব বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না।