প্রধান মেনু

বিএনপি’র অজগর সাপ সব গিলে খেয়ে ফেলে — তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো বড় অজগর সাপ, সব গিলে খেয়ে ফেলে’। আজ সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী সংস্থা’র সাথে বৈঠকে সাংবাদিকরা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘কেঁচো খুঁড়তে আওয়ামী লীগের সাপ বেরিয়ে আসছে’ এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন।

ড. হাছান বলেন, ‘উনাদের (বিএনপি’র) যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উনি তো বড় অজগর সাপ, সব গিলে খেয়ে ফেলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এটির জন্য বিএনপি’র উচিত সরকারকে সাধুবাদ জানানো। যেখানেই মাদক, ক্যাসিনো বা অনিয়ম, সেখানেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সেখানে কে কোন মতের সেটি দেখা হচ্ছে না’। ‘বিএনপির আমলেই এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বরং তারা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘হাওয়া ভবন বানিয়ে প্রত্যেক ব্যবসায় ১০% কমিশন বসানো হয়েছিল। খোয়াব ভবন বানিয়ে আমোদ-ফুর্তি করা হয়েছিল।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেই জায়গায় প্রধানমন্ত্রী এখন এই সমস্ত অনিয়ম, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অগ্রসর হচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে তো বিএনপির খুশি হওয়ার কথা, সাধুবাদ দেয়ার কথা। তাদের ব্যর্থতার জন্য লজ্জা পাওয়ার কথা। সেটি না বলে মির্জা ফখরুল সাহেব যা বলছেন, সেজন্য তাকে বলবো, নিজেদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন বড় অজগর সাপ, যেটি গিলে সব খেয়ে ফেলে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেখানে রেখে, নিজেরা বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল। তাদের এই নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার নাই।

‘দলের এমপি-মন্ত্রী এ ধরনের কাজে মদদদাতা হলে কী হবে’- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা পর পর তৃতীয়বার রাষ্ট্রক্ষমতায়। তৃতীয়বার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক অনুপ্রবেশকারী আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা যে কথাগুলো বলেছে আমি পত্র-পত্রিকা দু’এক জায়গায় দেখেছি, এই কথাগুলো ‘স্টিল নট ভেলিডেটেড’। তবে তাদের সাথে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’‘শিল্পী সম্মানী বৃদ্ধি প্রয়োজন’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান এ সময় বলেন, ‘শিল্পীরা সবাই না হলেও অনেকেই তাদের অভাব অভিযোগ কাউকে জানতে দেয় না। এবং জানতে না দিয়েই তারা নিজের বেদনা, নিজের যাতনা গোপন করে অন্যকে আনন্দ দেয়। সমাজকে তারা সঠিক খাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই জন্য আপনাদের যে দাবি আমরা সেটি বিস্তারিত আলোচনা করবো। তবে একটি দাবির সাথে আমি পুরোপুরি একমত যে, শিল্পী সম্মানী বাড়াতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা জাতিকে দু’টি স্বপ্নের কথা বলেছি- ২০২১ সাল নাগাদ পুরোপুরি মধ্যমআয়ের দেশ ও ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে রূপান্তরিত করার জন্য। এ জন্য প্রয়োজন, রাষ্ট্রের বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি উন্নত জাতি গঠন করা। এই উন্নত জাতি এবং মানবিক রাষ্ট্র গঠন করার ক্ষেত্রে আমি মনে করি শিল্পীদের একটি বিরাট ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে।’‘নতুন রূপে বিটিভি’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিটিভি ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে। এরপর বহু বছর কেটে গেছে, কিন্তু ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখা যেতো না, সীমান্তবর্তী এলাকায় যেটুকু দেখা যেতো, সেটি কোনো কনভেনশনাল চ্যানেলে নয়, এমনিতেই দেখা যেতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে ইতিমধ্যে ভারতে ডিটিএইচ ফ্রি ডিশের মাধ্যমে পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন বিনামূল্যে দেখানো শুরু হয়ে গেছে। আমি ক’দিন আগে ত্রিপুরা গেছি, ত্রিপুরাতে বাংলাদেশ টেলিভিশন-সহ বাংলাদেশের অনেকগুলো চ্যানেল দেখা যায়, আমি নিজে দেখেছি।’

মন্ত্রী বলেন, “বিটিভিতে অডিশন বন্ধ ছিল অনেক বছর, সেগুলো চালু করা হয়েছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা চালু করা হয়েছে। ‘নতুন কুঁড়ি’ পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” ‘সুস্থ জীবনের জন্য সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে

মন্ত্রী শিল্পীদের বলেন, ‘আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই, আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা শুধু বেতার টেলিভিশন নয়, পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। কারণ মানুষ যাতে মাদকাসক্তির বাইরে থাকে, যাতে জঙ্গিবাদে কেউ উদ্বুদ্ধ না হয়, এতে সংস্কৃতির চর্চার কোনো বিকল্প নেই। যেখানে সংস্কৃতি চর্চা বেশি, সেখানে কিন্তু মাদক এবং জঙ্গিবাদ বাসা বাঁধতে পারে না। সুতরাং এক্ষেত্রে আমি মনে করি যে সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই।’

‘ত্রিপুরা-মেঘালয়ের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি’ সম্প্রতি কলকাতা-আগরতলা-শিলং সফর প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কলকাতা গিয়েছিলাম কলকাতা প্রেসক্লাবের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: কলকাতার সাংবাদিকরা ও প্রেসক্লাব কলকাতা’ শিরোনামে পুস্তকের ওপর আলোচনায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ওয়ার করসপন্ডেন্ট’ হিসেবে কাজ করেছে তাদের ৬ থেকে ৭ জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছেন। গ্রন্থটি একটি অনন্য দলিল।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এর পর আমি ত্রিপুরা গিয়েছিলাম। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ‘কানেকটিভিটি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আগামী বছর নাগাদ ত্রিপুরার সাথে আমাদের রেল-যোগাযোগ স্থাপিত হবে। রেল-যোগাযোগ স্থাপনে ভারতের অংশে যে কাজ হয়েছে সেটিও দেখেছি আমাদের অংশে যে কাজ হয়েছে সেটিও দেখেছি। সেখানে আমরা গিয়েছিলাম মূলত আগরতলায় বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য। কারণ ত্রিপুরা রাজ্যে ৭০ ভাগ মানুষ বাংলা ভাষাভাষি। তাদের দাবি ছিল সেখানে একটা চলচ্চিত্র উৎসব করা।

আগামী বছর ১৭ মার্চ যে মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্মরণে ত্রিপুরায় একটি রাস্তার নামকরণ অথবা একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।’ ‘এর পর আমরা মেঘালয়ে গিয়েছিলাম, সেখানেও মুজিববর্ষ নিয়ে আলোচনা হয়েছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী, গভর্নর, স্পিকারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ‘কানেকটিভিটি’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মেঘালয় সরকারও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি সেখানে স্থাপন করার সিদ্ধান্তের কথা বলেছে।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ মুরাদ হাসান, অতিরিক্ত সচিব মোঃ মিজান-উল- আলম, শিল্পী সংস্থার সভাপতি ড. ইনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আজম বাশার ও সদস্যদের মধ্যে এস এম মহসিন, মোঃ খালেকুজ্জামান, বুলবুল মহলানবিশ, ইফ্ফাত আরা নার্গিস, আজিজুর রহমান, কবি রবীন্দ্র গোপ, সিবু রায়, সহিদুল আলম সাচ্চু, মুনমুন আহমেদ, হাসান মতিউর রহমান, সমীর বাউল, নিলুফার বেগম নীলা, জিনিয়া জোৎস্না, নিলুফার বানু নিলা, সফি আহমদ সেলিম, রাজিয়া সুলতানা মুন্নি, সীমা চৌধুরী, শিরীন শিলা, বর্ণালী সরকার, অধ্যক্ষ শিউলি মালা, পারভিন শিলা, আজমা সুরাইয়া, সাহানা চৌধুরী নূরুন নাহার, যাদুকর এস এ রানা প্রমুখ সভায় অংশ নেন।