প্রধান মেনু

মামলা প্রত্যাহার করায় ছকিরউদ্দিনকে হত্যার হুমকি, হরিণাকুন্ডু থানায় জিডি করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার!

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ মামলা প্রত্যাহার করায় ইউপি মেম্বর আনিচুর রহমানসহ তার সহযোগিরা হত্যার হুমকি দেওয়ার পর ছকির উদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়ে পুলিশের হেনস্তার শিকার হয়েছেন। রোববার সকালে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। হত্যার হুমকি দেওয়ার পর থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়নকান্তি গ্রামের ভ্যানচালক ছকিরউদ্দিন ।

সেখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তা জিডি নিতে গড়িমসি করেন। তাঁকে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান এর কাছে যেতে বলেন ওই কর্মকর্তা। ছকির উদ্দিন ওসির রুমে গেলে হরিণাকুন্ডু থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি মোঃ আসাদুজ্জামান নির্দেশ দেন তাকে থানা গারদে ডুকাতে।জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারন ডায়েরি করতে গিয়ে সামান্য একজন দিনমজুর ছকির উদ্দিনকে বিনা অপরাধে ৭ ঘন্টা থানা গারদে থাকতে হলো । ভ্যানচালক ছকির একটি লিখিত ডায়েরি নিয়ে ওসি’র কাছে গেলে তিনি নিজে স্থাণীয় এক সাংবাদিকের সামনে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে যায়, এর পর নিরীহ ছকির ওসি ও মেম্বারকে হাতেপায়ে ধরে অনেক আকুতি মিনতি করতে থাকে।

তারপরও তাকে আটক করে থানা গারদে পাঠানো হয়। ছকির উদ্দিনের ডায়েরি অনুসারে জানাযায়, ছকির উদ্দিন গত ১৬-০৫-২০১৯ইং তারিখে প্রতিবেশী আশরাফুলের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এবং পরে হরিণাকুন্ডু থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। স্থানীয় ভাবে আপোষ- মিমাংসা হওয়ায় পরের দিন ১৭-০৫-২০১৯ ইং তারিখে সে থানায় হাজির হয়ে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেয়। অভিযোগ প্রত্যাহার করায় তাহেরহুদা ইউনিয়নের ৯নং ওয়াডের মেম্বর আনিচুর রহমান ও তার লোকজন বসতবাড়িতে গিয়ে ছকিরউদ্দিনকে ভয়ভীতির হুমকি এবং এক পর্যায়ে তাকে খুন করার হুমকি দেয় তারা। হত্যার হুমকি দেওয়ায় জীবনের নিরাপত্তার জন্য সে হরিণাকুন্ডু থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করার জন্য গিয়েছিল।

কিন্তু হরিণাকুন্ডু থানার ওসি তার কোন কথায় না শুনে তাকে মারতে যায় এবং থানা গারদে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।একটি শার্তানেসি মহলকে খুশি এবং উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই হরিণাকুন্ডু থানার ওসি সামান্য একজন দিনমজুর ভ্যানচালক ছকিরউদ্দিনকে থানা গারদে সাত ঘন্টা আটকে রাখে।ছকিরউদ্দিনকে ব্যবহার করে থানার ওসি,আনিচ মেম্বরসহ একটি মহল মোটা অংকের বানিজ্য করতে চেয়েছিল।আনিচ মেম্বরসহ স্থানীয় একটি গ্রুপ তাদের প্ররোচনায় ছকিরউদ্দিন অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়।

প্রতিবেশিদের সাথে মিমাংসা হওয়ায় ওসি ও মেম্বরসহ সকলের বানিজ্য ভ’ন্ডুল হয়ে যাওয়ায় ছকির উদ্দিনের উপর তারা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে।এসব কারনেই ছকির থানায় জিডি করতে গেলে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশের পর তাকে ছেড়ে দেয়। নারায়নকান্তি গ্রামের ছেলে ঢাকায় বসবাসরত শাহারিয়ার রহমান জহুরুল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার ছোট্রভাই আশরাফুল প্যানেলের সাথে প্রতিপক্ষ গ্রুপ স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানের প্যানেলের মধ্যে নারায়নকান্তি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা হয়।নির্বাচনে ম্বেবরের গ্রুপ জয়ি হয়।

আমার ভাই প্রতিদ্বন্দিতা করার কারনেই আনিচের গ্রুপসহ একটি মহল ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিপক্ষকে ফাঁশাতে মহলটি মরিয়া হয়ে উঠে,সাথে সাথে পেয়েও যায় সামান্য একটি ঘটনা। ছকিরচাচার ছেলের সামান্য একটি ঘটনাকে পুজি করে প্ররোচনামূলক ভাবে চাচাকে দিয়ে জোর করে থানায় অভিযোগ করান।আমি ঘটনাটি জানতে পেরে সেইরাতে ঢাকা থেকে রওনা হই গ্রামের উদ্দেশ্যে।গ্রামে এসে এলাকার মাতব্বরদের সাথে বসে ছকির চাচার সাথে সমস্যাটি সমাধান করি এবং আপোষ-মিমাংসা করে আমি ও ছকির চাচা থানায় গিয়ে তার অভিযোগটি লিখিতভাবে প্রত্যাহার করেন নেন।

থানায় অভিযোগ প্রত্যাহার করতে গিয়েও আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়।অভিযোগ প্রত্যাহার করার পর প্রতিপক্ষ ছকির চাচার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে তার বাড়িতে গিয়ে প্রাননাশের হুমকি দিলে আমি চাচাকে বলি থানায় গিয়ে একটি জিডি করতে।সেকারনেই সেদিন ছকিরচাচা থানায় জিডি করতে যেয়ে এভাবে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। জিডির ব্যাপারে জানতে চাইলে হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশের ওসি মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে ছকিরউদ্দিন, তাহেরহুদা ইউনিয়নের ৯নং ওয়াডের ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে এসেছিল।

এর আগে ছকিরউদ্দিন একই গ্রামের আশরাফুলসহ কয়েকজনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়।অভিযোগ দেওয়ার আগে তারা হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে গিয়ে অভিযোগ করেন এবং স্যার আমাকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেন।স্যারের নির্দেশ পেয়ে এবং একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দি এস.আই জলিলকে। পরের দিনই ছকিরউদ্দিন আপোষ- মিমাংসা করে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়।

কিন্ত আবারও ছকিরউদ্দিন থানায় ইউপি মেম্বরের নামে ডায়েরি করতে আসলে আমি তাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য এবং এসব ঝামেলা থেকে তাকে মুক্ত রাখার জন্য কিছুক্ষন থানায় বসিয়ে রেখে তার পরিবারকে ডেকে তাকে সেড়েদি।কিছুলোক তাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে,ছকিরকে গারদে আটকানো হয়নি। হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশ ঘুষ-বানিজ্যের আকড়ায় পরিনত হওয়ায় ছকিরউদ্দিনদের মত সাধারন দিনমজুর,কৃষক ,ভ্যানচালকরা বর্তমান পুলিশের ওসির নিকট থেকে সেবাতো দুরের কথা উল্টা হয়রানির শিকার হতে হয়।

উল্লেখ্য জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হরিনাকুন্ডু থানার মধ্যে হাতুড়িপেটা, মাত্র এক শতক জমি নিয়ে বিরোধ মিমাংশার জন্য গত ২৭ এপ্রিল শনিবার রাতে হরিণাকুন্ডু থানায় হাজির হয়েছিল হরিণাকুন্ডু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ বুলু। সেদিন থানার গোল ঘরে চলছিল শালিস দরবার। উভয়ই পক্ষের সমর্থকরা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। আগে থেকেই হাতুড়ি, দা লাঠিসোটা নিয়ে হাজির ছিল পারফলসী গ্রামের মনোয়ার, আনোয়ার, ছব্দুল, সহিদুল (বুড়ো), নূর আলী, আফিল উদ্দীন, আয়ুব, আহমান ও মুবিন।

মধ্যস্থতায় ছিলেন হরিণাকুন্ডু থানার ওসি ও এস আই সরোয়ার। শালিস চলার এক পর্যায়ে হঠাৎ হামলা। হাতুড়ি আর দা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ভাইস চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ বুলুর উপর। রক্তাক্ত জখম হয় বুলু। দ্রুত তাকে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। ওই সময় ভাইস চেয়ারম্যানের সমর্থক সাইদুল, বিল্লাল ,লালু, সাকিব, হাবিল ও সিরাজুল ইসলামও কম বেশি আহত হন। খবর পেয়ে হরিণাকুন্ডুর নবাগত উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন আহতদের হাসপাতালে দেখতে ছুটে যান।

থানার ওসি ও এসআই সরোয়ার বলেন ঘটনাটি অনাক্ষাংখিত। এর জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেন।থানা হচ্ছে অপরাধিদের দমনের স্থান আর সেখানেই দাঙ্গা-হামলা-মারপিট,তাহলে ছকিরউদ্দিনদের মত সাধারন মানুষ কোথায় বিচার চায়বেন, হরিণাকুন্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এই চরম ব্যার্থতার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।ওই ঘটনায় বাদী হয়ে কোন মামলা করেননি হরিণাকুন্ডু থানার ওসি।