প্রধান মেনু

শ্বশুর বাড়ি আত্মহত্যা বললেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা বলছে পরিবার, শৈলকুপার গৃহবধূ সোনিয়া হত্যার আসামীরা অধরা,বাদীকে হত্যার হুমকি

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : শৈলকুপা উপজেলার গোয়াল খালি গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন আত্মহত্যা বললেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা বলছে নিহতের পরিবার। নিহতের স্বজনদের দাবি, যৌতুকের জন্য সোনিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল সোনিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সোনিয়ার স্বজনদের অভিযোগ, শাশুড়ি মর্জিনা খাতুনের প্ররোচনায় ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ক্রমাগত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে সোনিয়ার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল দাবী স্বজনদের।সোনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ফিরোজ মন্ডল বাদী হয়ে যৌতুকের কারণে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ এনে গত ২২ এপ্রিলে শৈলকুপা থানায় চারজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের কোরেন।

যাহার মামলা নং ২৮। গত ২৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে আসামীরা বাদীর বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রসহ প্রবেশ করে গালিগালাজ ,হুমকি ,মারপিট করে এবং বাদীর বাড়ি থেকে সোনা,টাকা ও গরু-বাছুর লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ফিরোজ বাদী হয়ে ঝিনাইদহ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিঃ আমলী আদালতে ১২জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে একমাস পেরিয়ে গেলেও আজও পর্যন্ত শৈলকুপা থানা পুলিশ মামলার কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামী আবের আলী সর্দ্দার শৈলকুপা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বাড়িতে থেকেই মামলা তুলে নিতে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে বাদী জানান।

শৈলকুপা থানার মামলার বাদী ফিরোজ মন্ডল বলেন,গত রবিবার থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে বলি ৪নং আসামী আবের আলী বাড়িতে থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তখন তিনি বলেন মেন আসামী ধরার পর তাকে ধরবো। সূত্রে জানা গেছে ,৪নং আসামী আবের আলী সর্দ্দার একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। ২০০৩সালের মে মাসে আবের আলীকে যৌথ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে এবং তার নিকট থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ চারটি অস্ত্র উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী।সেই মামলায় সন্ত্রাসী আবেরের দশবছর সাজা হয় এবং পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়। উল্লেখ্যঃ গৃহবধূ সোনিয়া শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা নিয়ে শৈলকুপা উপজেলায় স্বামী-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ ও থানায় মামলা না নেওয়ার প্রতিবাদে লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছিল নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসি।

প্রেমের সর্ম্পকের জেরে ১ বছর আগে উপজেলার গোয়াল খালি গ্রামের ফিরোজ হোসেনের মেয়ে সোনিয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের বাদশা হোসেনের ছেলে সজীব হোসেনের সাথে। বিয়ের পর থেকে সোনিয়াকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে আসছিল স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরই জের ধরে গত ২১ এপ্রিল রোজ রোববার সকালে সোনিয়াকে হত্যা করে গলায় ওড়না দিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে ঘরে তালা দিয়ে পলিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে নিহতের পিতা-মাতা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতার পরিবারের লোকজন থানায় হত্যা মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে অপমৃত্যুর একটি মামলা রেকর্ড করে। সেই সাথে আটক হওয়া শ্বশুর ও শ্বাশুড়ীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আয়ুবুর রহমান বলেন, সোনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। পরবর্তীতে সোনিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে যৌতুকের কারণে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা করে। কিন্তু তার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার কথাটি এসেছে। এখন মামলাটি প্ররোচনামূলক আত্মহত্যার দিকে মোড় নিবে। ওসি আরো বলেন,আসামীদের ধরার জন্য সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সোনিয়ার শাশুড়িসহ দায়ী ব্যক্তিরা কেউ ছাড় পাবে না।