প্রধান মেনু

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়া ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস

শামীমুল ইসলাম শামীম,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। জেলার শিক্ষাখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে।ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে শিক্ষা সেক্টরে পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য সব দপ্তরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে ৬টি উপজেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শাখা ও ইউনিটেই ‘ঘুষ’ একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছে।

বায়োমেট্রিক হাজিরার মেসিং কিনতে, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, জাতীয়করণ এমনকি অবসরের পর পেনশনের টাকা তুলতেও ঘুষ চলছে অবাধে। বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশনে দুর্নীতি কমলেও প্রথমিক শিক্ষা খাতে তার ছোঁয়া লাগেনি। ঘুষ-দুর্নীতি নিশ্চিত করতে এমন সব কৌশল আবিষ্কার হয়েছে যা রীতিমতো বিস্ময়কর। ঝিনাইদহের ছেলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস খুলনা বিভাগীয় অফিসের প্রধান অফিস সহকারি বাশারুল হক এর নেতৃত্বে ঘুষ লেনদেন বাণিজ্য সফল করতে জেলা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট।

ঝিনাইদহ জেলাতে সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত খুলনা বিভাগীয় অফিসের প্রধান অফিস সহকারি বাশারুল হক, সদর উপজেলা শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুশতাক আহমদ, জেলা ডিপিও অফিসের সহকারি কাম হিসাব রক্ষক মোঃ আইনাল হক ,সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এটিইও ফেরদৌস আরা, এটিইও হাসান মাসুদ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোঃ আকতারুজ্জামানসহ জেলার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারির সমন্নয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে,সিন্ডিকেট সদস্যরা সকলেই কোটি কোটি টাকা, গাড়ি, আলিশান বাড়ি,ঢাকায় ফ্লাটের মালিক। সদর উপজেলার মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেকে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অনৈতিক সুবিধা আদায় করছে বেপরোয়াভাবে। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণের উদ্যোগের সময় কমবেশি ২০ ধাপে ঘুষ দিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের আগে পরিদর্শককে ঘুষ দিতে হয়।

এর ফলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রিপোর্ট দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও অজ্ঞতা কারনে তা আমলে নেওয়া হয় না। কখনো আমলে নিয়ে তদন্ত হলেও এই সিন্ডিকেট এক হয়ে ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এলেও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা অফিসের সিন্ডিকেটে বড় ভূমিকা পালন করেন জেলা ডিপিও অফিসের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আইনাল হক ও গাড়ী চালক সাব্বির আহম্মেদ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এক শ্রেনীর দালাল শিক্ষকরা এই সিন্ডিকেটের মদদ যুগিয়ে চলেছেন।অত্যান্ত দুঃক্ষের বিষয় তারা কেউই স্কুল করেন না।বিদ্যালয় চলাকালিন সময় তাদের প্রায়ই সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং ডিপিইও অফিসে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

সূত্রমতে জানা যায়,সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাক আহম্মেদ দুর্নীতির মামলায় বর্তমানে শ্রীঘরে রয়েছেন।তার ঝিনাইদহ জেলায় যোগদানের থেকে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা গ্রহনের আলামত পাওয়া যায়।প্রতি স্কুলের ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ থেকে ৫হাজার টাকা কর্তন করা হয়েছে।শাপলা দল গঠনের ২ হাজার টাকা বরাদ্দ থেকে প্রতি স্কুলের থেকে ৬০০টাকা কর্তন করা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে আট টাকার নোট বই ৩৫ টাকা করে বিক্রয় করা হয়েছে।

এসব অপকর্ম ও দুর্নীতিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান। গত ৫/৫/২০১৯ তারিখে ডাঃ কে আহমেদ কমিউনিটি সেন্টারে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন মহোদ্বয়ের উপস্থিতিতে ঝিনাইদহ প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান হালচাল,গুনগত মান,উন্নয়ন নিয়ে মতবিনিময় হয় উক্ত সবাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সদর শিক্ষা অফিসের দুর্নীতি অনিয়মের কথা শিক্ষক ও অভিভাবকগণ খুব্দ হয়ে প্রকাশ করেন।

বালিয়া ডাঙ্গার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিতা রানী ঘোষ,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সদর শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ- দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।উপস্থিত সকলেই এহেন সিমাহীন ঘুষ-দুর্নীতি,অনিয়মের তীব্র প্রতিবাদ জানান।উহার নিরসনে সংশ্লিষ্ট মহলের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।মতবিনিময় সভাশেষে সচিব মহোদ্বয় সহ অন্যান্যরা চলেগেলে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরা শিক্ষকদের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান অশ্রাব্দ ভাষায় গালাগালি করেন ও বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন। তারা কি ভাবে চাকুরী করেন তা দেখে নেওয়ার ভয়ভীতি প্রর্দশন করেন।

বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নীতি এবং এহেন গহীত আচরনের জন্য ঝিনাইদহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ তাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেন।  জেলা শিক্ষা দপ্তরের একই কর্মকর্তা যুগের পর যুগ চাকুরী করার কারণে তারা নানা ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করে। দীর্ঘদিন একই স্থানে প্রশাসনিক পদে থাকা এসব কর্মকর্তা দুর্নীতির এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা।

তারাই সেবা না করে ঘুষ- দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সেকারনেই অভিলম্বে তাদের খুলনা বিভাগ থেকে দূরবর্তী স্থানে বদলির কামনা করেন।ঝিনাইদহের সচেতন মহল মনে করেন এই দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তিদের বদলির শাস্তি প্রদান করলে ঝিনাইদার প্রাথমিক শিক্ষা অঙ্গন দুর্নীতি মুক্ত হবে।তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ঝিনাইদহের সচেতন মহল।



(পরের খবর) »