আগামীকাল ঐতিহাসিক প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস গাজীপুরে দিনব্যাপী ব্যাপক আয়োজন
আগামীকাল ১৯ শে মার্চ ঐতিহাসিক প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের (তৎকালীন জয়দেবপুর) বীর জনতা গর্জে উঠেছিল এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল । প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস উদযাপন উপলক্ষে গাজীপুরে আগামীকাল দিনব্যাপী ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বীরদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সে সময়ের জয়দেবপুরের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজ ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে লাখ লাখ জনতার ঢল নেমেছিল ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। এ সময় কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুত কমে গেছে অজুহাতে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রের সংবাদ বঙ্গবন্ধুকে জানাই। এ অবস্থায় আমাদের কি করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বাঘের মতো গর্জে উঠে বললেন, “তুই একটা আহম্মক, কি শিখেছিস যে বলে দিতে হবে”। একটু পায়চারী করে রাগতস্বরে বললেন, “বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেয়া যাবে না। Resist at the cost of anything” । নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম। ১৯শে মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়বেদপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। এ সময় মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানার শ্রমিক জনতা চারিদিক থেকে লাঠিসোটা, দা, দোনলা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়।
জয়দেবপুর রেল গেইটে মালগাড়ির বগি, রেলের অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে যেভাবে পেরেছে তা দিয়ে এক বিশাল বেরিকেড দেয়া হয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরো ৫টি বেরিকেড দেয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফিরে যেতে না পারে। ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন-কমান্ড মেজর কে এম শফিউল্লাহকে (পরবর্তীকালে প্রধান সেনাপতি) জনতার উপর গুলি বর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতার উপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ে সামনে আসতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উপরে অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর উপর পালাক্রমে গুলি বর্ষণ করি। মন্ত্রী জানান, আমরা যখন বেরিকেড দিচ্ছিলাম তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়ীকে জনতা আটকে দেয়।
সে কনভয়ে থাকা ৫জন সৈন্যের চাইনিজ রাইফেল ও এলএমজি তাদের নিকট থেকে কেড়ে নেয়া হয়। এদিকে রেল গেইটের বেরিকেড সরানোর জন্য ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেয়। পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে কয়েকজন শহীদ হন, আহত হন শত শত বীর জনতা। বর্তমানে সেই স্থানে চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।
পরদিন বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলাকালে পাক বহিনীর আক্রমনে ১৯ মার্চের নিহতের কথা উল্লেখ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করে যে, জয়দেবপুরের জনতা পাক বাহিনীর উপর আধুনিক অস্ত্র ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সৈন্য আহত হয়েছে। ১৯ মার্চের পর সারা বাংলাদেশে স্লোগান উঠে “জয়দেবপুরের পথ ধর – বাংলাদেশ স্বাধীন কর, জয়দেবপুরের পথ ধর – সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর”। মন্ত্রী জানান, ১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক মাইলফলক। ১৯ শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জাতীয় জীবনে এক স্মরণীয় দিন। তাই জাতীয়ভাবে এই দিবসটি পালিত হলে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন যথার্থভাবে হবে বলে আমি মনে করি।