প্রধান মেনু

অভিনব প্রতারনা চক্রের নারী নেত্রী সৈয়দপুরের বীথি অবশেষে গ্রেফতার

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী সংবাদদাতা ॥ প্রথমে কোন পুরুষের মোবাইলে যায় ৪৯ টাকার ফ্যাক্সীলোড। এর কিছুক্ষন পর ওই নম্বরে আসে কল। সুন্দর নারী কন্ঠে বলা হয় ভুল করে আপনার নম্বরে ফ্যাক্সী চলে গেছে। একটু দয়া করে ফেরত দিবেন কি এই নম্বরে। পুরুষটি ওই টাকা ওই নারীর মোবাইল নম্বরে ফ্যাক্সীলোড ফেরত পাঠায়। ফেরত পেয়ে পুন:রায় কল করে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই পুরুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে নারীটি বলে, ভাবতেই পারিনি টাকাটা ফেরত পাবো।

এই পৃথিবীতে এখনও কত ভাল মানুষ আছে। এরপর প্রতিদিন ওই নারী একবার হতে দুইবার সেই পুরুষকে কল দিয়ে কথা বলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বিস্তারিত পরিচয় জানতে চায়। ধীরে ধীরে ভাব জমিয়ে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুলতে ওই পুরুষকে দেখা করার জন্য উগ্রিব হয়ে পড়ে। না দেখলে বাঁচবেনা আরও কত কি। বেচারা সেই পুরুষ কিছু বোঝার আগেই পা দিয়ে ফেলে ফাঁদে।

এরপর দেখা। সেই নারীর বাসায় নিয়ে গিয়ে ঘরের ভেতর একটু অন্তরঙ্গ হবার চেষ্টা। এসময় হঠাৎ সেই নারীর আত্মচিৎকার ‘বাঁচাও বাঁচাও’। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে ৫-৬ জন পুরুষ। তারপর সেই নারীর ফাঁদে পড়া পুরুষ বেচারা খেতে থাকে উত্তম-মধ্যম। তখন ধর্ষন বা শ্লীলতাহানীর মামলার ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় ৩-৫ লাখ টাকা। কল করে সেই পুরুষের পরিবারকে জানিয়ে দরদাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারপর ছেড়ে দেয়া হয় সেই পুরুষকে।

দীর্ঘ দিন ধরে নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এভাবে অভিনব পন্থায় এই নারী চক্রের হাতে অসংখ্য পুরুষ নাজেহাল হয়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছে। এই চক্রের প্রধান নেত্রী জীবন নাহার বীথি (২৫) অবশেষে নীলফামারী ডিবি ও থানা পুলিশের অভিযানে হাতে গ্রেফতার হয়েছে। গত ১০ মার্চ রবিবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয় জেলা সদরের ফুলতলা হঠাৎপাড়া নামক স্থানে এক ভাড়াবাসা থেকে। ওই নারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার দক্ষিন সোনাখুলী গ্রামের আলতাব হোসেনের মেয়ে। তার স্বামী নুর ইসলাম এ কাজে স্ত্রীকে সহায়তা করে থাকে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরো বেশ কিছু যুবতী ও পুরুষ সদস্য।

পুলিশি অভিযানে অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয় বীথি। পুলিশ বাকী সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। এদিকে গ্রেফতারের পর ওই নারী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।

নীলফামারী থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম জানান, ওই নারী চক্রের খপ্পরে পড়া বেশ কিছু ব্যাক্তি থানায় লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগের পর বেশ কিছুদিন ধরে গোপনে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় নীলফামারী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি বিকালে ওই নারী সিনিয়র জুডিসিয়াল আমলি আদালত-১ এ উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করেছে। এ ঘটনায় সৈয়দপুর সহ পুরো নীলফামারী জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের এমন সাফল্যে জনমনে স্বস্তির সাথে প্রতারণা চক্রের অন্যদেরও দ্রুত আটকের বিষয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে।