২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে
মাহফুজুর রহমান বিপ্লব, ফরিদপুর প্রতিনিধি : হতদরিদ্র মানুষের ঘামে ভেজা শ্রমের জমানো প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্থ্য হাজারো গ্রাহক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বপ্নভাঙ্গা ক্ষত আর ব্যাথায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে হাজারো পরিবার। জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নে ভিলেজ মাল্টিপারপাস লিমিটেড নামে একটি এনজিও স্থাপন করেন ওই এলাকার মিরাজ নামের এক যুবক।
প্রতিষ্ঠানটিতে ওই এলাকাসহ আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ দৈনিক হারে টাকা সঞ্চয় করে আসছিল। ভালো সাফল্য আর মুনাফা কেন্দ্রিক এনজি’ও টির প্রতি অশুভ দৃষ্টি দেন ফরিদপুর কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরী। নানা ষড়যন্ত্র করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মিরাজকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ভিলেজ মাল্টিপারপাস এনজি’ওটির সকল সম্পদ সহ মালিকানা ক্রয় করান আপন ভাই মোস্তফা চৌধুরীর নামে। এরপর এই প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র গ্রাহকরা নানাভাবে প্রতারিত হতে থাকেন।
হাজারো গ্রাহকের সঞ্চয়ী প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সামচুল আলম চৌধুরী। এখানেই শেষ নয়। ক্ষতিগ্রস্থ্য দরিদ্র পরিবারের গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত চাইলে তাদের উপর নেমে আসে নানা অত্যাচার নির্যাতন। স্থানীয়ভাবে সামচুল আলম চৌধুরী প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের জমানো সম্পদ ফেরত চাওয়ারও সাহস পাচ্ছেনা। ভূক্তভোগী গ্রাহকরা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন ফরিদপুর কোতয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরী। অল্পদিনের মধ্যেই রাজনীতিকে ভর করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তিনি। নামে বেনামে পাহাড় সমান সম্পদ গড়েছেন তিনি। সমাজের অশুভ চক্র থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের নানা মাধ্যমে তার রয়েছে যোগাযোগ।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর সদর উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রন করে আসছেন সামচুল আলম চৌধুরী। টি আর, কাবিখা সহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। এছাড়া সরকারি চাল ও গম ক্রয়ে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন। জেলা খাদ্য অধিদপ্তর ছিল তার নিয়ন্ত্রনে। এখান থেকেও মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া নদী দখল করে বালু উত্তোলন, শালিস বানিজ্য, তদবির, চাকুরী দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সামচুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
শুধুমাত্র এসব কর্মকান্ড করেই তিনি থেমে নেই। শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নানা উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর বাইরে সরকারি অফিস আদালতে বিভিন্ন তদবির বানিজ্যেও জড়িত রয়েছেন তিনি। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শালিস বিচারের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন সামচুল আলম চৌধুরী। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে সরাসরি অর্থের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বমূলক শালিস করে থাকেন তিনি।
এছাড়া সদর উপজেলার বিভিন্ন খাস জমি ও জলা তার দখলে রয়েছে। তারা আরো বলেন, পদ্মা, কুমার নদ, মরা কুমারসহ বিভিন্ন নদ নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন তিনি। শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অনৈতিক ব্যবসার পেছনে রয়েছেন সামচুল আলম চৌধুরী। হোটেলগুলো থেকেও মাসিক হারে তিনি অর্থ পেয়ে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ফরিদপুরের অন্যতম বানিজ্যিক কেন্দ্র নিউ মার্কেট চকবাজার ব্যবসায়ী মহলের একক ক্ষমতার অধিকারী সামচুল আলম চৌধুরী।
এই দুই বানিজ্যিক এলাকার সকল ব্যবসায়ী তার কাছে জিম্মি। বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে ফরিদপুরের চাল ডাল তেল ব্যবসার নানা সামগ্রী রপ্তানী আমদানীতে তার একটা বিশেষ কমিশন বানিজ্য রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাষানচর চৌধুরীডাঙ্গি এলাকায় সামচুল আলম চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ি। সামচুল আলম চৌধুরীর পরিবার বিএনপির রাজনীতির ধারক বাহক। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নানা পদে রয়েছেন তার পরিবার ও আত্মীস্বজনরা।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন সামচুল আলম চৌধুরী। এরপর কোতয়ালী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন সামচুল আলম চৌধুরী। কয়েক বছর আগে তিনি কোতোয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। আর এই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থ, প্রাচুর্য্যরে মালিক হয়ে যান তিনি। কিছুদিন আগে শহরের উত্তর আলীপুর এলাকায় অবৈধ অর্থের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাসভবন।
ওই বাড়িতেই তিনি এখন থাকছেন। সূত্র আরো জানায়, বিগত দিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। ওই সময়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ আজো ফেরত পাননি অনেকেই। রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সুবাদে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়না।
এছাড়া কিছুদিন আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তার উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে সামচুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ওই অফিসের কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার দরপত্র তার প্রতিষ্ঠানের নামে জোড়পূর্বক নিয়ে নেন তিনি। এছাড়া সামচুল আলম চৌধুরীর রয়েছে ইটভাটা, একাধিক ট্রাক, নৌযান, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন বিপনী বিতানে অসংখ্য দোকান। শহরের নামী দামী এলাকায় নামে বেনামে রয়েছে একাধিক ফ্লাট।
বিভিন্ন ব্যাংকে তার রয়েছে একাধিক একাউন্ট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরে সামচুল আলম চৌধুরীর রয়েছে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেওয়া হয় অর্থ। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন চিকিৎসককে জোড়পূর্বক হুমকি দিয়ে তার হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রোগীদের পাঠাতে বাধ্য হয় ।