২০ বছরেও শেষ হয়নি কপিলমুনি ব্রিজের নির্মাণ কাজ কপোতাক্ষে পরিত্যক্ত ১৬ পিলারই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে
এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা) ঃ সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ জনপদের বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি-
সাতক্ষীরা তথা ভারতের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রায় ১ শ’ বছরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভরা যৌবনা কপোতাক্ষের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও গত ১৯ বছরেও তা শেষ হয়নি। মাঝ পথে ২০০৩ সালে নানা অযুহাতে নির্মাণকাজ বন্ধের সাথে সাথে মৃত্যু হয় বিস্তীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের।
এমন অবস্থায় কপোতাক্ষের বুকে ফেলে রাখা ব্রিজের ১৬ টি অকেজো পিলারে জোয়ারের পলিমিশ্রিত পানি বাঁধাগ্রস্থ হয়ে মাত্র কয়েক বছরে নব্যতা হ্রাসে নদীটি পরিণত হয় একটি মরাখালে। এরপর নদীর প্রাণ ফেরাতে সরকার প্রায় ৩ শ’কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে কপোতাক্ষ খনন করলেও নানা দূর্নীতি-অনিয়মের সাথে ফেলে রাখা ১৬ টি পিলারই যেন আজ কপোতাক্ষের যৌবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমান সরকার ফের অবহেলিত জনপদের বঞ্চিত মানুষেরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের প্রত্যাশা, নদী বক্ষের ১৬ টি পিলার অপসারনের পাশাপাশি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সরকার একই এলাকায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন।
ব্রিটিশ শাষনামল থেকে সুন্দরবন উপকূলীয় ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি-কাশিমনগর কেন্দ্রীক বাণিজ্যিক প্রসারতায় প্রায় ১ কিঃমিঃ দূরত্বে কপিলমুনি ও কাশিমনগর হাট-বাজার গড়ে ওঠে। নদীর প্রাণ থাকায় ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে অল্প দিনেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হাট-বাজারগুলি ব্যাপক গুরুত্ব পায়। তবে নব্যতা সংকটে একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌপথ। অন্যদিকে অব্যাহত নব্যতা সংকটে নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে পলিভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু কালের স্বাক্ষী কপোতাক্ষ নদ।
নদীটিকে ঘিওে রয়েছে বহু ইতিহাস-ঐতিহ্য। কপোতাক্ষকে ঘিরে এর দু’তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাণিজ্যিক নগরী ও জনবসতি। প্রাচীণ আমল থেকে নদীটিকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন-জীবীকার নির্ভর করে আসছে। কয়েক বছরে কপোতাক্ষের অকাল মৃত্যুতে উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবীকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এক সময় নদীটিকে বাঁচাতে নেমে পড়েন আন্দোলন-সংগ্রাশে। বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে কপোতাক্ষ খননে ২০১১ সালের নভেম্বরে একনেকের সভায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।
কপোতাক্ষ খননে ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়মের পরও ফিরে আসে জোয়ার-ভাটা, বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্নে নদীর উপর নির্ভরশীল জনপদের মানুষষের মধ্যে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। তবে ২০০০ সালে শুরু হয়ে ২০০৩ এ বন্ধ হওয়া কপিলমুনির নির্মাণাধীন ব্রিজের ১৬টি বৃহদাকারের পিলার যেন ফের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটির স্বাভাবিক গতি সচলে। আধুনিক কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে সরাসরি কলিকাতার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কপোতাক্ষের কপিলমুনি-কানাইদিয়া এলাকায় প্রায় ১শ’ বছর পূর্বে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।
যার জন্য পর্যাপ্ত টাকা সংগ্রহ করে তৎকালীণ কোলকাতা সেন্ট্রাল ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন। তবে সৃষ্টিশীল নানা চিন্তায় ঐসময় ব্রিজ নির্মাণ সম্ভব না হলেও কোলকাতার ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার লভ্যাংশ আসতো কপিলমুনির বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। এরপর ক্ষণজন্মা বিনোদের অকাল মৃত্যুতে থমকে যায় ব্রিজ নির্মাণ স্বপ্ন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিনোদের রেখে যাওয়া টাকার লভ্যাংশ কিংবা কোন টাকা ফেরৎ না পেলেও এলাকাবাসী ব্রিজ মির্মাণে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। এক পর্যায়ে ২০০০ সালে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম-দূর্নীতিতে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। সংশিষ্ট সূত্র জানায়, তৎকালিন সময় কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া ব্রিজ নির্মাণ কাজে সরকার ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০০ শ’ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা ব্যয় বরাদ্দ দেয়। তবে উপকরণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি ও কাজের মান উন্নয়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রেক্ষিতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে তা ২কোটি ৩৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তির পর নির্মাণের দায়িত্ব পান খুলনা-৬ এর তৎকালীণ সাংসদ এ্যাড শেখ মো: নূরুল হকের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক এসোসিয়েট।
কার্যাদেশ পাওয়ারপর ২০০০ সালের ১২ই এপ্রিল এর কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে বরাদ্দের ১কোটি ৬৭লাখ ৭২২টাকা উত্তোলণ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে ব্রিজটি নির্মাণ বাস্তবায়ন নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে দায়েরকৃত মামলা নং পি-৫৮/০৬। ধারা ৪০৬/৪২০/১০৯/৩৪। যার ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা সহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রতার কারনে ব্রিজ নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
ব্রিজটির বাকী কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপ নামের আরো একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় উক্ত নির্মাণ কাজ শুরু করলেও নদীর উপর নির্মিত ১৬ টি পিলারের কয়েকটি বেঁকে যাওয়ায় মূলত তারাও কাজটি সম্পন্ন করতে না পারায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ। সর্বশেষ উন্নয়ন বান্ধব সরকার তয় বারের মত সরকার গঠন করায় জনপদের মানুষ আবারো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ব্রিজটি বাস্তবায়নের।