পাইকগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল ছাত্র গুরুতর আহত : বাস ভাংচুর : যান চলাচল বন্ধ
এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা) ॥ পাইকগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাঈদ মুনতাছির সাব্বির নামে এক
স্কুল ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাস ভাংচুর করেছে। ভাংচুরের প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সময় আন্দোলনরত কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। পুলিশ ঘাতক পরিবহনকে জব্দ করেছে। আহত সাব্বির মুমুর্ষূ অবস্থায় খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ভিলেজ পাইকগাছা গ্রামের দিনমজুর মুনসুর আলী সরদারের ছেলে ও পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাঈদ মুনতাছির সাব্বির প্রাইভেট পড়ে বাইসাইকেলযোগে বাড়ী যাওয়ার সময় উপজেলা সদরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনে পৌছালে পরিবহন কাউন্টার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ঢাকা মেট্টো-ব-১৪-৬৫০৬ নং যাত্রীবাহী দ্রুতগামী ঈগল পরিবহন সাব্বিরকে ধাক্কা দেয়। এ সময় সাইকেল থেকে ছিটকে গেলে পরিবহনটি সাব্বিরকে কয়েক মিটার টেনে নিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সবশেষে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় সাব্বির নিহত হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ঘটনাস্থলে সমবেত হয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিবহন কাউন্টার থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছাত্ররা প্রথমে ঈগল পরিবহন কাউন্টারের সামনে বিভিন্ন মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নির্বাপন করার সময় পুলিশের এস,আই মহিউদ্দীন আহত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে অবস্থান নেয়।
এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি প্রচেষ্টা চালায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর ও জেলা পরিষদ সদস্য শেখ কামরুল হাসান টিপু। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন ছাত্র জিরোপয়েন্টে সড়কের উপর রাখা পিরোজপুর-জ-০৫-০০১৬ নং বাস ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ উত্তেজিত ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় এম,এ আহাদ সুমন, খালিদ বিন ওয়ালিদ, নিয়াজ উদ্দীন, শাহরিয়ার আহমেদ জয়, সাজ্জাদুল ইসলাম সাজু, গোলাম মুক্তাদির, নাঈমুজ্জামান দিপু, জীম ও জয় বৈরাগী সহ কয়েকজন ছাত্র কমবেশী আহত হয়। অপরদিকে, ৩ মটর শ্রমিক আহত হয় বলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে সড়কে বাস বেরিকেট দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পুলিশ ঘাতক পরিবহনটিকে জব্দ করে থানায় নেয়। দুপুরের দিকে খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব সহ সংগঠণের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ সময় জাকির হোসেন জানান, আমাদের বাস দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল না। অথচ, ছাত্ররা আমাদের বাস ভাংচুর করেছে। বর্তমানে পাইকগাছা-খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর কোন প্রতিকার না হলে আগামীতে বিভাগের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রধান শিক্ষক সেখ আবুল হোসেন জানান, দুর্ঘটনাটি স্কুল শুরু হওয়ার আগেই ঘটেছে। আমরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করছে। আমরা তাদেরকে স্বাভাবিক রাখা সহ স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি।
জিরোপয়েন্ট এলাকায় অবস্থানরত ছাত্রদের উপর পুলিশ চড়াও হলে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। এছাড়া শ্রমিকরা আমাদের শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানান, দুর্ঘটনার কারণে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সড়কে অবস্থান নিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল ১০টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে থানাপুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।