বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাণী
প্রধানমন্ত্রীর বাণীঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০১৮ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৩ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী আধাসামরিকবাহিনী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপামর জনসাধারণের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জন সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড় ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ বাহিনীর ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানেরই অনন্য স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশমাতৃকার জন্য দায়িত্বপালনকালে এ বাহিনীর যে সকল সদস্য শাহাদত বরণ করেছেন আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ খ্যাত বিজিবি সদস্যরা দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধ, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানসহ সরকার অর্পিত অন্যান্য দায়িত্বপালনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। আমরা এ বাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ পাশ করেছি। বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবলের প্রাধিকার বৃদ্ধিসহ পদবি কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বাহিনীর কর্ম গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ৫টি রিজিয়ন সৃজনের মাধ্যমে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। নতুন ৪টি সেক্টর ও ১৭টি ব্যাটেলিয়ন সৃজন করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ যাবত ৩৮৪ জন নারী সৈনিকসহ ২৬ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। সর্বনিম্নপদ থেকে সুবেদার মেজর পর্যন্ত সদস্যদের সীমান্ত ভাতা প্রদান, অগ্রিম বেতনসহ দু’মাসের ছুটি ভোগের সুবিধা, রেশন, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিজিবি’র সার্বিক কল্যাণে বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন এবং ‘সীমান্ত ব্যাংক’ স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক আধুনিকবাহিনীতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে এয়ার উইং সৃজন করা হয়েছে। এ বাহিনীকে বিশ্বমানের সীমান্তরক্ষীবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমি আশা করি, এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে সততা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্য রাখবেন। আমি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর সার্বিক সাফল্য এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
রাষ্ট্রপতির বাণীঃ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০১৮ উপলক্ষে নিম্নো ক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দু’শ তেইশ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী আধাসামরিকবাহিনী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর অবিস্মরণীয় অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফসহ এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য আত্মোৎসর্গ করে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বাহিনীকে ২০০৮ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশমাতৃকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিজিবি’র যে সকল সদস্য আত্মত্যাগ করেছেন আমি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি। সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান, মাদক, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধসহ সন্ত্রাস দমন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও দুর্যোগকালীন উদ্ধার কর্মকা-ে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ এর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিজিবিকে একটি আধুনিক সীমান্তরক্ষীবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ পাশের মাধ্যমে এ বাহিনীর সার্বিক কর্মকা-ে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিজিবি’র অব্যাহত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বিজিবি’র সকল সদস্য দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্বপালন করবেন-এটাই সকলের প্রত্যাশা। আমি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর অব্যাহত সাফল্য কামনা করি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”