প্রধান মেনু

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মহাজোটের ‘উন্মুক্ত’ লড়াই 

মমিনুল ইসলাম বাবু, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ঃ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন বন্টন নিয়ে ‘সমঝোতা’ না হওয়ায় কুড়িগ্রাম-৪ আসন ‘উন্মুক্ত’ রেখে প্রার্থী দিয়েছেন মহাজোটের বিভিন্ন শরিক দল। এরফলে আ.লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমূখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  জানাগেছে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনটি একসময় জাতীয় পার্টির দূর্গ বলে খ্যাত হলেও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ভোটের মাঠে সুবিধা করে উঠতে পারছে না দলটি। চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টির ভোটে ভাটা পড়েছে।
এ আসনে আ.লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিবের মধ্যে ত্রি-মূখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর বাইরেও আলোচনায় রয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।  এ আসনে মোট ১৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে মহাজোটের প্রধান দল আ.লীগ থেকে সাবেক সাংসদ জাকির হোসেন প্রতিদ্বন্দিতা করবেন নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টি’র আশরাফ-উদ-দৌলা লাঙ্গল প্রতীকে, বিএনপি জোট থেকে একক প্রার্থী বিএনপি’র আজিজুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে, গণফোরম’র মাহফুজার রহমান উদীয়মান সূর্য প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আনছার উদ্দিন হাতপাখা প্রতীকে, বাংলাদেশ বিল্পবী ওয়াকার্স পার্টির মহী উদ্দিন আহম্মেদ  কোদাল প্রতীকে, সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ’র আবুল বাশার মঞ্জু মই প্রতীকে, গণতন্ত্রী পার্টির আব্দুস সালাম কালাম কবুতর প্রতীকে, জাকের পার্টির শাহ আলম ফুল প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিব সিংহ প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান এইচ সরকার মোটর গাড়ী(কার) প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমান আলী ডাব প্রতীকেম  স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ আলী লড়বেন কুড়াল প্রতীকে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর আলম লড়বেন ট্রাক প্রতীকে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মোট ভোট রয়েছে ২,৮৯,১৪৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার- ১,৪১,৮০৩ ও নারী ভোটার-১,৪৭,৩১৪ জন।প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৯১ সালে ৫ম সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৫ আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির গোলাম হোসেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে ২১,৯৯১ পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতে ইসলামী’র সিরাজুল হক পান ১৫,৮৫৪। ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির গোলাম হোসেন। তিনি ৪২,৭৯০ পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম। তিনি ২১,৫১৪ ভোট পান।
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির গোলাম হাবিব। তিনি ৬২,৪৮৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামী’র আব্দুল লতিফ। তিনি দাড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করে ৪৩,০২৫ ভোট পান। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আ.লীগের জাকির হোসেন। তিনি নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করে ৭৩,৯১৩ ভোটে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির গোলাম হাবিব লাঙ্গল প্রতীকে পান ৫৩,৬৮২ ভোট।  ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিব নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টির (জেপি মঞ্জু) রহুল আমিন সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তিনি ৩২,৬০৭ ভোট পেয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন আওয়ামীলীগের জাকির হোসেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ২৪, ৯৩৯ ভোট পান।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিগত নির্বাচনের পরিসংখ্যান জাতীয় পার্টির পক্ষে হলেও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দলটির ভোটে টান পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি। অপরদিকে আ.লীগের জাকির হোসেন ৯ম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলেও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অবদান রাখতে না পারায় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ১০ম সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন।
এ নির্বাচনে এলাকার অপরিচিত দল জাতীয় পার্টির (জেপি মঞ্জু) রুহুল আমিন সাইকেল প্রতীক নিয়ে আ.লীগ প্রার্থী জাকির হোসেনকে পরাজিত করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আ.লীগ প্রার্থী জাকির হোসেনের সাথে তিন উপজেলার আ.লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ ভোটারদের মতে এই সমন্বয়হীনতা কাটাতে না পারলে ভোটের মাঠে পিছিয়ে পড়বে দলটি।এদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও সাবেক সাংসদ গোলাম হাবিব।
৮ম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগ থেকে এ আসনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আলোচনার মধ্যমনি হয়ে আছেন তিনি। সাধারণ ভোটারদের মতে, এ আসনে মহাজোটগত ভাবে আসনটি উন্মুক্ত না রেখে জোটগত ভাবে নির্বাচন করলে আ.লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম হাবিবের মধ্যে ত্রি-মূখী লড়াই হবে। তবে মহাজোট থেকে আসনটি উন্মুক্ত রাখা হলে ত্রি-মূখী লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে আ.লীগ।  এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, অধ্যক্ষ ইউনুছ আলী ও ঈমান আলীও ভোটের মাঠে সমীকরণ হতে পারেন। কারণ এই তিন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলে আ.লীগ ও বিএনপি’র গলা কাঁটা হতে পারে।