প্রধান মেনু

বিরোধ নিরসন    গাংনীতে আ’লীগ ঐক্যবদ্ধ

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনীঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মেহেরপুর-২ আসেনে (গাংনী) আওয়ামী লীগের দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা কোন্দল নিরসন হয়েছে। শুক্রবার রাতে উভয় গ্রুপের নেতৃবৃন্দের তিন ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নতুন শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে গাংনীর বিভিন্ন প্রান্তে নেতাকর্মীদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।

মেহেরপুর-২ আসনটি গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল হক নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। এর পরে অদ্যবধি আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারেনি। ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মকবুল হোসেন দলীয় মনোনয়ন পান। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কাছে প্রায় আড়াই হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।

এছাড়াও দলীয় প্রতীকে তিনি ২০০১ সালে পরাজিত হন। দুই বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি দুই বার জয়লাভ করেন। এসব বিষয় নিয়েও মকবুল হোসেন ও এমএ খালেক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবাদ চলে আসছিল। এ আসনটিতে অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী আমজাদ হোসেন এবার মনোনয়ন পাননি। জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ঢাকার শিল্পতি জাভেদ মাসুদ পেয়েছেন দলীয় টিকিট। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও নতুন। তাই দুই নতুনকে ঘিরে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা এখন নির্বাচনে মনোযোগ দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক গ্রুপের মধ্যে চরম বিভক্তি ছিল। এই বিরোধে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকরা ছিলেন না স্বস্তিতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর থেকেই ঐক্যের বিষয়ে চেষ্টা করছিলেন বিভিন্ন মহল।

সাহিদুজ্জামান খোকন ছিলেন এমএ খালেক গ্রুপ। তবে তার সাথে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের সখ্যতা ছিল। ঐক্যের অংশ হিসেবে গত ৮ ডিসেম্বর সাংসদ মকবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। এতে গ্রুপিং নিরসনের এক দারুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মতবিনিময়, ব্যক্তি পর্যায়ের আলোচনা শেষে শুক্রবার রাত আটটায় এমএ খালেকের গাংনীস্থ বাস ভবনে বৈঠক শুরু হয়। এতে উভয় গ্রুপের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন।

দীর্ঘ তিন ঘন্টার আলোচনার পর নৌকা প্রতীক বিজয়ী করার অঙ্গিকার নিয়ে ঐক্যবদ্ধে পৌঁছান নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে রাত সাড়ে এগারটার দিকে এমএ খালেকের বাস ভবনের নীচতলায় সাংবাদিকদের কাছে ঐক্যের কথা তুলে ধরে সাংসদ মকবুল হোসেন, জেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি একেএম শফিকুল আলম ও সাবেক পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীসহ নেতৃবৃন্দ। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের শক্তিশারী রুপ দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বাইরে অপেক্ষমান কয়েকশ’ নেতাকর্মী।

এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে আবার জয়লাভ করতে পারেন, আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন এ ব্যাপারে আমারা সবাই একমত হয়েছি। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, আগামি ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হবে তাতে আমরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকার পক্ষে সকল নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করলাম। সেই কমিটি এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করলাম। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন দ্রুত সম্পন্ন হবে। ইনশাল্লাহ ৩০ তারিখে যেকোন মূল্যে আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনবো।

শেখ হাসিনাকে এখানে নৌকার সিট উপহার দেবো। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি একেএম শফিকুল আলম বলেন, মুজিবভক্ত যে যেখানে আছি তাদের কাছে আমাদের বার্তা যে, আমরা সকল দ্বিধা-সংকোচ, সকল ভেদাভেদ এই মুর্হূত থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যেকোন মূল্যে আমরা নৌকার বিজয়কে ছিনিয়ে আনবো।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ঐক্যের খবরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। এ প্রসঙ্গে মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল আহম্মেদ বলেন, এবার নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে। কেননা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীরা ছিলেন বিভ্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে অনৈক্যর সুযোগ কাজে লাগিয়েছে প্রতিপক্ষ। এবার ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের নতুন শক্তি দেখবে গাংনীবাসী।