রায়পুরে সেবক ও শাপলা মাল্টিপারপাস কো- অপারেটিভ সোসাইটি লি: ৪’ শ গ্রাহকের সাড়ে ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও
মো: আবদুল কাদের, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌর শহরের সরকারী কলেজ রোডস্থ ল্যাংড়া বাজার এলাকার শরিফ মঞ্জিলে সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির প্রতারনায় ৪’শ গ্রাহকের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে তোলপাড় চলছে। এঘটনায় ইউপি কার্যালয়, থানা ও আদালতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ও টাকাগুলো উদ্ধারে মামলা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার পরও ৫ জন ঢাকা শহরে পলাতক থাকলেও, ৪জন বীরদর্পে শহরে চলাচল করছে। গ্রাহকরা তাদের টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের মৌলুভী সাহাবুদ্দিন বাড়ীর মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে কামাল হোসেন, মুফতি জাকির হোসেন ও উত্তর কেরোয়া গ্রামের আব্দুল ও হাবের ছেলে। রায়পুুর শাখার ঐ সমিতির সমন্বয়কারী ডেকোরেটর ব্যাবসায়ী হাফেজ মোঃ ফারুক হোসেন ও তাহার স্ত্রী নাজমুন নাহার এবং তার ভাবী মাসুদা খাতুনসহ ১৪ জন কর্মী নিয়োগ দিয়ে ২০০৯ সালের ১২ মে।
উপজেলা সমবায় কার্যালয় কর্তৃক সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতি (নং-৩৭৬-১ (লক্ষ্মী) অনুমোদন নিয়ে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী শহরের ল্যাংড়া বাজার এলাকার শরিফ মঞ্জিলে কার্যক্রম শুরু করেন। নিজস্ব মূলধন সৃষ্টি ও তা বিনিয়োগের মাধ্যমে সদস্যদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন, সম্পদ সংগ্রহ ও কর্ম সংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি সমিতির গ্রাহকের শেয়ার, সঞ্চয়, ভর্তি, এফডিআর, এমপিডিআরসহ বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪’শ গ্রাহক সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে রশিদ ও বইয়ের মাধ্যমে ৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা করে উত্তোলন করেন। সেই জমানোর টাকার কিছু অংশের টাকায় শেয়ার হোল্ডাররা তাদের স্বজনের নামে জমি কিনে বাকী টাকা তারা আত্মসাৎ করে অফিস বন্ধ করে ঢাকায় চলে যান।
মাসিক টাকা অফিসে জমা দিতে এসে অফিস ও শেয়ারা হোল্ডারদের না পেয়ে গ্রাহকদের মাঝে উত্তেজনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গাজী কমপ্লেক্সের ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম মুন্না, আবু তাহের, কেরোয়া গ্রামের গৃহবধু শান্তি বেগম ও ছকিনা বেগমসহ ১০ জন গ্রাহক জানান, শেয়ার, সঞ্চয়, ভর্তি, এফডিআর, এমপিডিআরসহ বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধাপে ৭৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৬০ টাকা সমিতিতে জমা দেওয়া হয়। এই টাকা না পেয়ে আবু তাহের কামাল, আনোয়ার ও জাকিরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন (যা বর্তমান আদালতে বিচারাধীন)। কেরোয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের স্ত্রী শান্তি বেগমের কাছ থেকে ব্যাংকের চেয়েও বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সমিতির শেয়ার হোল্ডার শহরের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী হাফেজ ফারুক হোসেন ৬ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।
পরে টাকাগুলো উদ্ধারে শান্তি বেগম কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেও টাকাগুলো পাচ্ছেন না। একই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী পেয়ারা বেগমের ৫০ হাজার, মৃত রুস্তম আলীর স্ত্রী ছকিনা বেগমের ২ লক্ষ ৬০ হাজার, তোফায়েলের স্ত্রী হালিমা বেগমের ৬০ হাজার টাকা ও আত্মসাৎ করেন হাফেজ ফারুক হোসেন। কাফিলাতলী গ্রামের জাফর আহাম্মদের স্ত্রী ১ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলায় ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ওই সমিতির সদস্য হাফেজ ফারুক হোসেন ২২ দিন কারাভোগ করে ওই টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ী রফিক উল্যাহ ব্যবসায়ী ১৪ লক্ষ, ফখরুল ইসলাম মুন্নার ২৮ লক্ষ ৩০ হাজার, কেরোয়া গ্রামের ডাক্তার খালেকের ৮ লক্ষ, চরপাতা গ্রামের ১০ লাখ, আলমগীর হোসেন এর দেড় কোটি টাকাসহ প্রায় ৪’শ গ্রাহকের সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছেন ওই সমিতির শেয়ার হোল্ডার তিন ভাই কামাল, আনোয়ার ও মুফতি জাকির হোসেন।
পরে ব্যবসায়ী মুন্না নিরুপায় হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেন (যা বর্তমান আদালতে বিচারাধীন)। অভিযুক্ত হাফেজ ফারুক হোসেন বলেন, আমি কোন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করিনি ও দস্তক্ষত (স্বাক্ষর) করি নাই। সব টাকাই শান্তি বেগমসহ অন্যান্য গ্রাহকরা সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির কাছে গিয়েছে। সমিতির মালিক হলেন পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের মৌলুভী সাহাবুদ্দিন বাড়ীর মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও মুফতি জাকির হোসেন।
তারাই টাকা মেরে দিয়ে ঢাকা শহরে পলাতক রয়েছে, আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন। এ ব্যাপারে কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ্জাহান কামাল বলেন, সেবক ও শাপলা ১নামে দুটি মাল্টিপারপাস সমিতির একাংশের শেয়ার হোল্ডার ডেকোরেটর ব্যবসায়ী হাফেজ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে ৬ লাখ টাকার পাওনাদার হিসাবে লিখিত অভিযোগ করেন শান্তি বেগম নামে এক মহিলা। শালিশ বৈঠকে ফারুক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং দিবেন বলেও জানান। পরে ফারুক গ্রাম্য আদালতে না আসায় তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
১০-১২জন নিজ কর্মী অভিযোগ করে বলেন, এ ২টি সমিতির সমন্বয়কারী হাফেজ মোঃ ফারুক হোসেন সমিতির অফিস হইতে ৩০নং কেরোয়া মৌজার ১২৪২নং দাগে ৫.৩০ শতাংশ ও ৭.৫ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রার করে নেয় এবং নগদ টাকা নিয়ে তার বাড়ীর করেন। কিন্তু আমরা তার কর্মী ছিলাম, গ্রাহকের টাকা দেয় নাই। এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শিশির রঞ্জন জানায়, গ্রহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্যতা পাওয়ায় সেবক ও শাপলা পাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে দুটি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।