প্রধান মেনু

গফরগাঁওয়ের শতবর্ষী মসজিদের স্থান পরিবর্তন নিয়ে উত্তেজনা

শফিউর রহমান সেলিম, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ)  প্রতিনিধি:  ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ১০৩ বছরের পুরনো চরআলগী শনিপাড়া শহীদ জামে মসজিদের স্থান পরিবর্তন নিয়ে একবার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। আবার নতুন করে গত প্রায় ২৪ দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফের যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার অপরাধে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরআলগী শনিপাড়া জামে মসজিদে যোহরের নামাজ শেষে কোরআন শরীফ তেলায়াত করার সময় পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় দুই সহোদর আমির উদ্দিন মাষ্টার ও আলীম উদ্দিন সরকারকে ধরে নিয়ে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে দুজনকে গুলি করে হত্যা করে।

স্বাধীনতার পর শতবর্ষী মসজিদটি শহীদ ভ্রাতৃদ্বয়ের নামে অর্থাৎ ‘চরআলগী শনিপাড়া শহীদ জামে মসজিদ’ নামে নাম করণ করা হয়। প্রায় দুই বছর পূর্বে স্থানীয় একটি মহল মসজিদটি অন্যত্র সড়িয়ে নিতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু জনতার প্রতিরোধের মুখে চক্রটি মসজিদ সড়াতে ব্যর্থ হয়।

এদিকে মসজিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় শহীদ পরিবার মসজিদের সামনের জমি থেকে ৮ শতাংশ জমি মসজিদের নামে লিখে দেয়। পরে মসজিদটি প্রশস্ত করতে শহীদ পরিবারের লোকজন জমি বিক্রি করে জেলা পরিষদে দুই লাখ টাকা জামানত দিয়ে মসজিদ প্রশস্ত করনের জন্য জেলা পরিষদ থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়। সে অনুযায়ী টেন্ডারও হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ নতুন করে রাতারাতি মসজিদের একটু দুরে একই নামে আরেকটি মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় এবং বাশের চাটাই দিয়ে ঘর তৈরি করে নামাজ আদায় শুরু করে।

ফলে একই নামে দুই মসজিদ থাকায় জেলা পরিষদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্ধ বাতিল করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। সম্প্রতি দুই শহীদের পরিবারকে না জানিয়ে ওই মহলটি শনিপাড়া শহীদ জামে মসজিদের নামে অন্যত্র ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। তা নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে শহীদের সন্তান বেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা করে ইউএনও ও গফরগাঁও থানায় অভিযোগ করে।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ দুই শহীদের নামে শতবর্ষী পুরনো মসজিদের নামে নতুন আরেকটি মসজিদ না করতে বলে আসেন। পুলিশী বাধা এড়িয়ে ওরা আবারো একই নামে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করলে আবারো উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পাশাপাশি খুন খারাপির আশঙ্কা করছেন।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তি তফাজ্জল হোসেন, আব্দুল খালেক লোক লোকান্তরকে বলেন, শত বছরের পুরনো মসজিদটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য পুরনো মসজিদের সামনে জমি দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দও হয়। কিন্তু খুরশেদ আলম গংরা দুই শহীদকে অসম্মান করে একই নামে সামান্য দূরে আরেকটি নতুন মসজিদের সাইনবোর্ড টানায়ি দিয়ে সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এতে করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পাশাপাশি খুন খারাবিও হতে পারে। বিবদমান মসজিদ নিয়ে গ্রামের যে অবস্থা তাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

দুই শহীদের সন্তান শাহাজ উদ্দিন ও আতিকুল ইসলাম লোক লোকান্তরকে বলেন, শতবর্ষী মসজিদটি স্থান সংকুলান না হওয়ায় সামনের জমি থেকে ৮শতাংশ জমি লিখে দেয়া হয়। তার পরে খুরশেদ কিছু লোকজন নিয়ে অন্যত্র একই নামে আরেকটি মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে বিষয়টিকে জটিল করে তোলেন। এ কারনে সংষর্ঘও হয়।

গফরগাঁও থানার উপ পরিদর্শক এস আই আহসান হাবীব বলেন, মসজিদটি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছে। সম্প্রতি সময়ে দুই শহীদের নামে স্থাপিত পুরনো মসজিদের সামনে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন না করে অন্যত্র করায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ পুরনো মসজিদের সামনে মাহফিল করতে নিদের্শ দেয়। পরে বিষয়টির সুরাহা করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়।