প্রধান মেনু

কুড়িগ্রামে বাসন্তীর ভাগ্যে জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

৭৪এর আলোচিত বাসন্তী এখানো থাকে আঁধো-পেটো খড়ি কুড়িয়ে চলে তার জীবন। পরিবর্তন হয়নি কোন কিছুতেই শেষ সম্বলটুকু হারিয়েছে নদীতে। নেই থাকার মতো একটি ঘর এরপরও তার ভাগ্যে জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১টি ঘর। রয়েছে শুধু মাত্র একখানা বয়স্ক ভাতার কাড। খড়ি কুড়ানো তার এখন রোজ দিনের কাজ। নদীর ধারে প্রচন্ড রোদের তাপকে উসকে দেয়া বালির মাঝে খড়-কুটো কুড়ায় এখন সে। খড়ি কুড়ানোর মাঝে মাঝে একাই আপন মনে কথা বলে আর হাঁসে। তার ভাষা বোঝার উপায় নেই। কোন মানুষকে দেখলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। খেয়ে-না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে তার শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। পরনের কাপড় পুরোনো আর ময়লা। মাথার চুল বেশ খাটো। তবুও দৃষ্টি নেই কারো।
দিন বদলের পালায় এ দেশের অনেক কিছু বদলে গেলেও ৭৪’র দূর্ভিক্ষে ব্যাপক আলোচিত ক্ষুদা ও দারিদ্র্যের মূর্ত প্রতীক কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার আলোচিত বাসন্তীর কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনো বছরের প্রতিটি দিন তার কাছে আসে ৭৪’এর দুর্ভিক্ষ মতো। বাঁক প্রতিবন্ধি বাসস্তীর বয়স ৭০/৭৫ বছর মতো (জাতীয় পরিচয় পত্র জন্ম তাং ১১/১০/১৯৪২ হলেও বয়স্ক ভাতা কাডে জন্ম তাং- ১৩/০২/১৯৫১। এখানেও যেন রহস্য।
দাম্পত্য জীবনেও সে সুখের মুখ দেখেনি। স্বামী-সংসার হারানোর আগেও তাকে মা-বাবার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। পরগাছা হয়ে বেড়ে উঠা বাসন্তী তার দু’দাদা আশু ও বিশুর উপর নির্ভরশীল ছিল কিন্তু দাদা বিসু দাসও চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে এখন বড় দাদা আশু দাসের উপর তার ভরসা। তাদেরও নেই সম্বল। বারবার নদী ভাঙ্গনে বাসন্তিসহ হাজারো মানুষ হারিয়েছে তাদের ভিটামাটিসহ শেষ সম্বল। এরই এক পর্যায়ে বেশ কয়েক বছর আগে কারিতাস নামের একটি এনজিও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বাসন্তীর নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয় সেই সাথে বাসন্তির নামে একটি গ্রাম তৈরি করে। এটাই ছিল বাসন্তীর ঠিকানা। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে বাসন্তী গ্রামটিও আবারও বিলীন হয়ে যায়। বাসন্তীসহ পরিবার গুলো খোঁজে নতুন ঠিকানা বিভক্ত হয়ে যায় গ্রামের লোকজন।
ক্ষুদার জ্বালায় গ্রামটির অনেক পরিবার কারিতাসের ঘরগুলো বিক্রি করে দেয়। অবশেষে জোড়গাছ এলাকার একটি স্থানে নেয়া জায়গায় বাসন্তী এখন তার দাদার ছোট্ট ঘরে নিহত বিসু দাসের স্ত্রীর সাথে একটি ভাঙ্গা ঘরে থাকে। নিজের নামের বয়স্ক ভাতা কার্ডের ৩ মাস পর ১৫শ টাকা পায় তা দাদার হাতে তুলে দেয়। দাদার অভাব অনটনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাঁটায়। কিন্তু ৭৪’এর আলোচিত সেই বাসন্তির আজ মাথা গোজার ঠাইঠুকু না থাকলেও সরকারী ভাবে দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্প-২ (জমি আছে ঘর নাই) এর ১০৮টি ঘর বরাদ্দ চিলমারীতে আসলেও একটি ঘরও তার ভাগ্যে না জোটায় চারদিকে উঠেছে আলোচনার ঝড়।
এলাকার সচেতন মহলসহ সর্বস্থরের মানুষজন বলেন এটা আর নতুন কি বাসন্তীর কথা বলে অনেকেই আজ লাভোবান কিন্তু ভালোবান হয়নি বাসন্তী তার প্রমাণ সরকার অসহায়দের জন্য ঘর করে দিচ্ছে কিন্তু দায়িত্বরা অজ্ঞাত কারনে তার নামে ঘর বরাদ্দ তো দেয়ার দুরের কথা খবরও আর নেন না। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান আজগর আলী সরকার জানান, তার বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। পরে বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন এর সাথে সথা হলে তিনি জানান ঘরের তালিকা আগেই পাঠানো হয়েছিল আমি সরেজমিন গিয়েছিলাম তার জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হবে।